রিল্যাক্সেশন ব্যায়ামের গুরুত্ব
সুস্থ জীবনধারণের জন্য শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে ভারসাম্য রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভারসাম্য বজায় রাখতে রিল্যাক্সেশন ব্যায়ামের ভূমিকা অপরিহার্য। বিশেষ করে ঘুমের আগে কিছু সময় ব্যায়াম করা একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে, যা শরীর ও মনে আরাম এনে দেয়। রিল্যাক্সেশন ব্যায়ামগুলি মনের চাপ হ্রাস করতে এবং দেহকে শিথিল করতে সহায়তা করে, ফলে ঘুম আসা সহজ হয় এবং ঘুমের গুণগত মান উন্নত হয়।
ব্যায়ামের ফলে শরীর থেকে স্ট্রেস হরমোন, যেমন করটিসল, হ্রাস পায়। এই হরমোনের কম উপস্থিতি মানসিক চাপ কমাতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সহায়ক। তাছাড়া, রিল্যাক্সেশন ব্যায়ামগুলি শরীরের পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে, যা সাধারণত দৈনন্দিন কাজের সাথে সাথে তৈরি হওয়া ক্লান্তি এবং উদ্বেগের বিরুদ্ধে কার্যকর। এটি সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কারণ একটি সুস্থ শরীর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি নিশ্চিত করে।
শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে শরীরের রক্ত সঞ্চালন এবং অক্সিজেনের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা শরীরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। রিল্যাক্সেশন ব্যায়ামগুলি যেমন যোগ, মেডিটেশন বা স্ট্রেচিং মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে এবং রাতে ঘুমানোর প্রক্রিয়া সহজতর করে। বিশেষজ্ঞের মতে, এ ধরনের ব্যায়ামগুলো রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে অন্তত ২০-৩০ মিনিট সময় ব্যয় করা উচিত। এটি আমাদের স্নায়ুকে শান্ত রাখতে, চিন্তা পরিষ্কার করতে এবং শেষ পর্যন্ত একটি গভীর ও শান্ত ঘুম নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
প্রথম ব্যায়াম: শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম
ঘুমের আগে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম অতি কার্যকরী একটি পদ্ধতি যা আমাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং শিথিলতার অনুভূতি তৈরি করতে সহায়তা করে। সাধারণত, এই ব্যায়ামটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে করতে হয় এবং এটি ঘুমের জন্য প্রস্তুতিতে সাহায্য করে। সঠিক শ্বাস প্রশ্বাসের প্রযুক্তি ও সময়কাল বজায় রেখে ব্যবহার করা হলে, এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত লাভজনক হয়।
শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করার সময়, প্রথমে একটি আরামদায়ক স্থানে বসে বা শোয়া অবস্থায় নিতে হয়। এরপর, নাকের মাধ্যমে গভীর শ্বাস নিন এবং তা পাঁচ সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখুন। এই পর্যায়ে, মননশীলতার মাধ্যমে আপনার মনের চিন্তা গুলোকে একপাশে সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করুন। এরপর, মুখের মাধ্যমে শ্বাস ছেড়ে দিন। এই প্রক্রিয়াটিকে অন্তত ৫-৬ বার পুনরাবৃত্তি করুন। প্রতিবার শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়ার সময় আপনার মনকে শিথিল করার দিকে মনোনিবেশ করুন।
শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার শরীর অক্সিজেনের উচ্চমাত্রা পায়, যা স্নায়ু সিস্টেমকে শান্ত করে। এতে করে আপনার শরীরের টেনশন কমে যায় এবং বিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশেষ করে, গভীর শ্বাস নেওয়া হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী, যা রাতের ঘুমের সময় মানসিক এবং শারীরিকভাবে পুনরুদ্ধারে সহায়ক। এই ব্যায়ামটি সেরাটা তখন আসে যখন এটি নিয়মিতভাবে করা হয় এবং এটি আপনার ঘুমের গুণগত মান বাড়াতে সহায়তা করে।
দ্বিতীয় ব্যায়াম: শিথিলকরণ স্ট্রেচিং
শিথিলকরণ স্ট্রেচিং একটি কার্যকরী পদ্ধতি যা শরীর ও মনে শান্তি এনে দেয়। এই পদ্ধতিটি বিশেষভাবে রাতের ঘুমের আগে করাকে সহায়ক বলে মনে করা হয়। শিথিলকরণ স্ট্রেচিংয়ের আর্থিক লাভ হলো, এটি দেহের বিভিন্ন অংশকে শিথিল করে এবং পেশীতে অ্যাক্সিডেন্টাল টেনশন হ্রাস করতে সহায়তা করে। আজ আমরা দেখবো শিথিলকরণ স্ট্রেচিংয়ের কিছু সহজ পদ্ধতি।
প্রথমত, আপনি দাঁড়িয়ে বা বসে সম্পূর্ণ শরীরকে দীর্ঘায়িত করতে পারেন। দুই হাতকে ওপরের দিকে মুখোমুখি করে তোলার মাধ্যমে গলা ও কাঁধের টান বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে, শ্বাস নেয়ার সময় হাত উপরে তুলুন এবং শ্বাস ছাড়ার সময় ধীরে ধীরে নিচে আসুন। এটি দেহের অংশগুলোকে সম্পূর্ণরূপে শিথিল করতে সাহায্য করে।
এরপর, কোমর এলাকার স্ট্রেচিং। একজন দর্শককে কোমর বরাবর উভয় হাতের সাহায্যে প্রশস্তভাবে প্রসারিত করতে হবে, যা কোমরের পেশীতে চাপে রাখতে সহায়ক। এতে কোমরের কাছে টেনশন কম হয় এবং সহজে শিথিল হয়। মনে রাখবেন, আপনাকে স্ট্রেচ করার সময় যথেষ্ট ধীরে চলতে হবে ताकि দেহের কোনো অংশে আঘাত না লাগে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রেচ হলো পায়ের পেশীগুলো শিথিল করা। হাঁটু ভেঙে, পায়ের আঙুলগুলোকে নিজের দিকে টেনে আনুন। এটি পায়ের ও পায়ের পিছনের পেশীগুলোর শিথিলকরণে সহায়তা করবে। শেষ করার আগে, ধীরে ধীরে শরীরকে সামনে ঝুঁকিয়ে আরো বেশ কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন। এছাড়াও, পাঁচ থেকে সাতবার পুনরাবৃত্তি করুন।
এইসব সহজ শিথিলকরণ স্ট্রেচিং পদ্ধতি রাতে খুবই কার্যকর। নিয়মিত অনুশীলন করলে, আপনি দ্রুত ঘুমাতে পারবেন এবং সকালে সতেজ অনুভব করবেন।
যোগ ব্যায়ামের গুরুত্ব
যোগ ব্যায়াম, একটি প্রাচীন ভারতীয় অনুশীলন, শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জগতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করে। এটি বিশেষভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক চাপ মোকাবেলায় সাহায্য করে। যোগ ব্যায়াম বিভিন্ন আসন, নিঃশ্বাসের অনুশীলন এবং ধ্যানের সংমিশ্রণে গঠিত। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন শরীরের পেশীগুলি শক্তিশালী হয়, তেমনি অন্যদিকে মানসিক প্রশান্তিও লাভ হয়।
সহজ যোগ ব্যায়াম
বিভিন্ন ধরনের যোগ ব্যায়াম রয়েছে, যা সহজ এবং প্রাথমিক স্তরের অভ্যাসের জন্য উপযুক্ত। যেমন:
- সুখাসন: এটি একটি সহজ আসন, যা শরীরের মাংসপেশীকে স্থিতিশীল করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- বালাসানা: এই আসনে পেটের উপর হেলান দিয়ে শিথিল অবস্থায় থাকা যায়, যা পুরো শরীরে মুক্তি এবং আরাম দেয়।
- শিশু আসন: এই পদ্ধতি কাঁধের ও মেরুদণ্ডের ব্যথা উপশম করতে কার্যকর।
- ধনুরাসন: এর মাধ্যমে শরীরের বেশিরভাগ পেশী একসাথে কাজ করে এবং শক্তি বাড়ায়।
- ব্রিজ পোজ: এই আসনটি মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করে এবং মানসিক চাপ কমায়।
যোগের কার্যকারিতা
যোগ ব্যায়াম করার সময় শরীরে যে পরিবর্তন ঘটে, তা অত্যন্ত কার্যকর। এটি শরীরের রক্ত-সঞ্চালন বাড়ায় এবং স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে। ফলে Stress Level কমে যায় এবং মনোসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত যোগ অভ্যাসের মাধ্যমে মানুষ নিজের অনুভূতি, ভাবনাগুলি বুঝতে এবং নিয়ে আসতে পারে, যা মানসিক চাপের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। যোগব্যায়াম কেবল শরীরকে শিথিলই করে না, বরং এটি মানসিক প্রশান্তিও প্রদান করে, যা একটি গভীর রিল্যাক্সেশন অনুভূতির সৃষ্টি করে।
মেডিটেশন
মেডিটেশন, বা ধ্যান, একটি প্রাচীন প্রক্রিয়া যা মানসিক শান্তি, মনোযোগ এবং আত্ম-জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি ঘুমের আগে শরীর এবং মনে বিশ্রাম প্রদান করতে পারে, যার ফলে ঘুমের মান উন্নত হয়। মেডিটেশনের সময়, ব্যক্তিরা একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে বসে ধ্যানের জন্য মনোনিবেশ করেন, যা তাদের অন্তরঙ্গতা এবং ন্যাচারাল রিল্যাক্সেশন অনুভব করতে সাহায্য করে।
মেডিটেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যেমন, চেতন মনকে শক্তিশালী করার জন্য স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস গ্রহণ ও নির্গমনের দিকে সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা হয়। কনসেন্ট্রেটিভ মেডিটেশন, যেখানে একটি শব্দ বা মন্ত্রের উপর ফোকাস করতে হয়, সমাজে বর্তমান বিভিন্ন মেডিটেশন পদ্ধতির মধ্যে একটি। অন্যদিকে, mindfulness মেডিটেশন সময় বর্তমান মুহূর্তের প্রতি সচেতন থাকার চেষ্টা করে, যা চিন্তা বিশ্লেষণ এবং নিবন্ধন করা সাধারণভাবে সাহায্য করে।
মেডিটেশনের অভ্যাস ঘটতে চলা মানসিক চাপ নিরসনের পাশাপাশি দুশ্চিন্তা কমাতেও সাহায্য করে। যখন মনে অশান্তি থাকে, তখন তা গভীর এবং শান্তিপূর্ণ ঘুমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। মেডিটেশন মাঝে মাঝে রাতের সময় করতে পারে, যা চিন্তা এবং উদ্বেগ কমায়, ফলে একজন ব্যক্তির ঘুমের প্রক্রিয়া উন্নত হয়।এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ইতিবাচক, বিশেষ করে ঘুমের মান উন্নতির জন্য।
শরীর এবং মন উভয়ই মেডিটেশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা ব্যক্তি আন্দাজ করতে পারেন। এটি কেবল মানসিক স্বাস্থ্যকেই নয়, বরং শারীরিক স্বাস্থ্যেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই, ঘুমের আগে মেডিটেশনের অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করলে, দীর্ঘমেয়াদী উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।
পঞ্চম ব্যায়াম: শিথিলকরণ সঙ্গীত
ঘুমের আগে শিথিলকরণ সঙ্গীত শোনা মানসিক চাপ কমাতে এবং গর্ভস্থ অবস্থার উন্নতি করতে ব্যাপকভাবে সহায়ক হতে পারে। শান্ত সঙ্গীত মস্তিষ্কে একটি প্রশান্ত পরিবেশ তৈরি করে, যা আমাদের শরীরের চাপ হ্রাসে সহায়তা করে। সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রকৃতির সঙ্গীত, ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত এবং সঠিকভাবে নির্বাচন করা ইনস্ট্রুমেন্টাল ট্র্যাকগুলি ছন্দভঙ্গি শোনার সময় আমাদের হৃদস্পন্দন এবং শ্বাসনালীকে ধীর করে দেয়, যা উষ্ণতা এবং প্রশান্তি অনুভূতি প্রদান করে।
শিথিলকরণের জন্য সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে, শোনার প্রক্রিয়া আরও কার্যকরী হয়ে ওঠে। প্রথমত, সঙ্গীত শোনার জন্য একটি আরামদায়ক পরিবেশন তৈরি করা উচিত। এটি হতে পারে একটি কোমল লাইট, অথবা একটি সুগন্ধি মোমবাতি যা আপনার অনুভূতিতে স্নিগ্ধতা যোগ করে। সঙ্গীত শোনার সময় নির্বিঘ্নে শুয়ে থাকা এবং দেহের খোঁচা বিনিময়ের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ককে সঙ্গীতের প্রতি মনোযোগ দিতে সাহায্য করতে হবে।
সঠিক সঙ্গীতের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে সঙ্গীত প্রকারগুলি ধীরগতির এবং শান্ত, সেগুলি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এদের মধ্যে পিয়ানো, হার্প, বা বায়োলিনের মৃদু সুর অন্তর্ভুক্ত। শিথিলকরণ সঙ্গীত শোনার সময় ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং মর্মস্পর্শী সঙ্গীতের অনুভূতি অনুযায়ী আপনার চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিগুলোকে দূরে সরিয়ে দিন।
এভাবে, শিথিলকরণ সঙ্গীত আমাদের ঘুমের পূর্বে মানসিক শান্তি এনে দেয় এবং ভদ্রভাবে আমাদের দেহের অবস্থার উন্নতি সাধন করতে সাহায্য করে। নিজের জন্য এমন সময় বরাদ্দ করে, আপনি আপনার স্বাস্থ্য এবং মঙ্গলকে সমর্থন করতে পারেন। সঙ্গীত আমাদের মন এবং শরীরের প্রয়োজনীয় ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে একটি শক্তিশালী শক্তি।
মনে রাখার বিষয়
রিল্যাক্সেশন ব্যায়ামের সময় বা পরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা উচিত, যা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে। এই ব্যায়ামগুলো শরীর ও মনে প্রশান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে। প্রথমত, আপনি যখন এসব ব্যায়াম করেন, তখন পুনরায় আপনার শারীরিক সংবেদনশীলতা এবং শক্তির স্তরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন। এটি আপনার সুস্থ্যতার জন্য ভালো এবং এ ধরনের অভ্যাস তৈরি করলে আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
দ্বিতীয়ত, ধ্যান এবং শব্দশান্তি ব্যায়ামগুলি সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। আপনার দৃষ্টি ও চিন্তাধারা একটি স্থির জায়গায় কেন্দ্রীভূত করা প্রশান্তির জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী। সঠিকভাবে শ্বাস নেওয়া এবং মস্তিষ্কের প্রশান্তি আয়ত্ত করা প্রতিটি ব্যায়ামের মূল অংশ। এক্ষেত্রে, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনার পরিবেশ শান্ত এবং অস্বস্তিকর নয়, যাতে আপনি সম্পূর্ণরূপে ব্যায়ামে মনোনিবেশ করতে পারেন।
এই ব্যায়ামগুলি নিয়মিত করলে আপনার মানসিক চাপ কমাতে এবং অত্যধিক চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করবে। ফলে, দৈনিক জীবনে ভালো ব্যবস্থাপনা এবং উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাবে। পেশীগুলি শিথিল ও দৈনন্দিন চাপ কম হলে নিবিড় নিদ্রার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার বিষয় হচ্ছে, সঠিক বাস্তবায়ন ও আপনি ব্যায়ামের পরের অনুভূতি আবারও রিফ্লেকশন করুন। এটি আপনাকে স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে এবং আগামীতে আরও কার্যকরী অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
ব্যায়ামের সময়কাল এবং প্রস্তাবনা
ঘুমানোর আগে রিল্যাক্সেশন ব্যায়ামগুলি সম্পাদনের সঠিক সময়কাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, সন্ধ্যার সময় থেকে রাতের প্রথম ভাগে ব্যায়ামগুলো দ্রুত সুবিধা প্রদান করে, কারণ এই সময় শরীরের প্রাকৃতিক ছন্দে পরিবর্তন আসে যা দ্রুত ঘুমানোর জন্য অনুকূল। রিল্যাক্সেশন ব্যায়ামগুলো যেমন ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম অথবা স্ট্রেচিং, সেগুলো করতে সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগতে পারে। এই ব্যায়ামগুলির মাধ্যমে শরীরের টেনশন কমে যায় এবং মানসিক চাপ হ্রাস পায়, ফলে ঘুমের জন্য প্রস্তুতি আরও সহজ হয়।
রিল্যাক্সেশন ব্যায়ামগুলোকে দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কিছু কার্যকর প্রস্তাবনা রয়েছে। প্রথমত, প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা উচিত, যাতে প্রতি রাতে এই ব্যায়ামগুলো করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, রাতের খাবারের পর ৩০ মিনিট পরে এই ব্যায়ামগুলিতে জড়িত হওয়া সঠিক একটি নিয়ম হতে পারে। দ্বিতীয়ত, নিজেকে একটি নীরব এবং আরামদায়ক পরিবেশে স্থান নির্ধারণ করুন, যেখানে বিরক্তির সম্ভাবনা ন্যূনতম। পরিবেশের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে সম্ভব হলে হালকা আলো বা মিউজিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানসিক প্রস্তুতি। ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে, মনকে শান্ত করতে এবং চাপ মুক্ত করতে কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত করা দরকার। আপনি যদি আপনার ব্যায়াম রুটিনে কিছু পরিবর্তন আনতে চান, তাহলে আস্তে আস্তে নতুন ব্যায়ামে সংযুক্ত হতে পারেন। এতে আপনার শারীরিক এবং মানসিক সামর্থ্যের উপর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ঠিকভাবে নিয়মিত রিল্যাক্সেশন ব্যায়ামগুলো জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করলে, তা আপনার ঘুমের অভিজ্ঞতা অনেক উন্নত করতে পারে।
উপসংহার
বর্তমান সময়ের তীব্রতা এবং চাপের কারণে রাতে ভালো ঘুম আসা অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরোল্লিখিত পাঁচটি রিল্যাক্সেশন ব্যায়াম, যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ, ধ্যান, মানসিক উদ্বেগ কমানোর ব্যায়াম, শরীরের স্ট্রেচিং এবং ইয়োগা, ঘুমের মান উন্নত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এই ব্যায়ামগুলো শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যকর নয়, বরং মানসিক শান্তি ও স্বস্তি প্রদানে সহায়ক।
প্রতিদিনের ব্যস্ততার Fলে কিছু সময় বের করে এই ব্যায়ামগুলো চর্চা করা গেলে তা শরীর ও মনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। যারা নিয়মিতই অস্থিরতা বা উদ্বেগ অনুভব করেন, তারা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজেদের মনে শান্তি আনতে পারেন। আবার, ইয়োগার মাধ্যমে শরীরের নমনীয়তা এবং ভারসাম্য ধরে রাখতে সাহায্য করে, যা হৃৎস্পন্দন ও শান্ত মন রাখতে অপরিহার্য।
এছাড়াও, এই ব্যায়ামগুলো ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিতে কার্যকর। ঘুমের আগে শারীরিকভাবে রিল্যাক্স হওয়া মানে দেহ ও মনে প্রভাবশালী সংবৃদ্ধি আনতে সহায়ক। ব্যায়ামের মাধ্যমে সৃষ্ট চাপ কমানোর ফলে ঘুমের গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। উপসংহারে, পাঠকদেরকে এই ব্যায়ামগুলো পরীক্ষা করা এবং তাদের মধ্যে কোনটিকে নিজেদের জীবনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত সেই বিষয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য নিয়মিতভাবে এই রিল্যাক্সেশন ব্যায়ামের চর্চা করায় উপকারিতা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।
