ঘুমের গুরুত্ব: কেন আমাদের নিয়মিত ঘুমের প্রয়োজন?
ঘুম আমাদের জীবনের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অংশ, যা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবিচ্ছেদ্য। ঘুমের প্রক্রিয়া আমাদের শরীরকে বিশ্রাম দেয় এবং বিভিন্ন কার্যক্রম পুনর্গঠন করে। সাধারণত, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রয়োজন অন্তত ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন সুবিধা লাভ হয়, যেগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে।
ঘুমের প্রাকৃতিক চক্র নিয়মিত স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শরীরে একটি ঘুম-জাগরণ স্রোত থাকে, যা শরীরকে নিয়মিত ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় সংকেত দেয়। যখন আমরা ঘুমের অভাবে ভুগি, তখন আমাদের মন এবং শরীর উভয়ের পারফর্ম্যান্স উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ঘুমের অভাব আমাদের মনোযোগ, স্মরণশক্তি, এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, ফলে অবসাদ এবং উদ্বেগ তৈরি হতে পারে।
উচ্চমানের ঘুমের অভিজ্ঞতা সৃষ্টির জন্য কিছু পরামর্শ কার্যকরী হতে পারে। প্রথমত, প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো এবং ওঠা একটি রুটিন তৈরি করা উচিত। দ্বিতীয়ত, ঘুমের পরিবেশটি আরামদায়ক এবং শীতল রাখতে প্রচেষ্টা করতে হবে। তৃতীয়ত, সিগারেট, ক্যাফেইন, এবং অ্যালকোহল জাতীয় পদার্থগুলি ঘুমের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাই এগুলি নিয়ন্ত্রিত করা উচিত। এছাড়াও, শারীরিক কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং চাপ মুক্তির কৌশলগুলি ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
এখনকার যুগে, প্রযুক্তির প্রভাবের কারণে অনেকেই ঘুমের সমস্যায় ভূগছেন। টেলিভিশন, স্মার্টফোনের মতো ডিভাইসগুলি ঘুমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং আমাদের সক্রিয় থাকার সময় বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং, ঘুমের গুরুত্ব উপলব্ধি করে, আমাদের উচিত নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি মেনে চলা এবং মানসম্পন্ন ঘুম নিশ্চিত করা।
নিয়মিত ঘুমের সময়সূচির সুবিধা
নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা জীবনে বিভিন্ন ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। প্রথমত, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এটি বিশেষ উপকারী। একটি সঠিক সময়ে ঘুমানো মানসিক ক্লান্তি কমায় এবং উদ্বেগের মাত্রা হ্রাস করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত সময়ে ঘুমান, তাঁরা সাধারণত মানসিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে থাকেন। এটি দীর্ঘমেয়াদে মানসিক সমস্যা যেমন ডিপ্রেশন কিংবা অঙ্গীকারহীনতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
শারীরিক শক্তির বৃদ্ধি নিয়মিত ঘুমের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের পেশী সারাংশ এবং শক্তি পুনর্গঠনে সহায়ক। যখন মানুষ নিয়মিত ঘুমায়, তখন তাঁদের শরীর বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণ করে, যা শক্তি বৃদ্ধি এবং পেশীর প্রবণতা তৈরি করে। তাই, বিশেষ করে শারীরিক অনুশীলনের সঙ্গে যুক্ত নাগরিকদের জন্য এটি অপরিহার্য।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও নিয়মিত ঘুম বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ঘুমের অভাব রক্তচাপ বাড়ানোর একটি প্রধান কারণ। একটি সুসংগঠিত ঘুমের সময়সূচি রক্তচাপের মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে আসে। তাছাড়া, নিয়মিত ঘুম দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতিতে সাহায্য করে। চোখে প্রতিদিনের পরিশ্রমের পর সঠিক বিশ্রাম প্রদানের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি সজীব এবং উজ্জ্বল থাকে।
এছাড়াও, নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি জীবনযাত্রার মৌলিক বিভিন্নতাকে প্রদর্শিত করে। সময়মতো ঘুমানো এবং উঠা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা আনে, যা একাধিক দিক থেকে জীবনের গুণগত মান বাড়ায়। এটি একটি সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য অপরিহার্য এবং জীবনের দৃষ্টিভঙ্গিকে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন করতে পারে।
ঘুমের অভ্যাস গঠন: কিভাবে একটি সময়সূচি তৈরি করবেন?
একটি স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস গঠন করার জন্য একটি কার্যকর সময়সূচি তৈরি করা অপরিহার্য। এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রথমত, একজন ব্যক্তিকে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে এবং একই সময়ে জাগতে চেষ্টা করতে হবে। এই ধরনের অভ্যাস শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে সমন্বয় করতে সাহায্য করে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ঘুমের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমানোর জায়গাটি শীতল, অন্ধকার, এবং নীরব রাখা উচিত। প্রায়শই, অতিরিক্ত শব্দ বা আলো ঘুমের সরকারকে বিরতি দিয়ে থাকে, যা গভীর ঘুমে বাধা দেয়। এছাড়াও, অনুভূতির জন্য আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি করা গেলে ঘুমাতে সহজ হবে।
এখনকার প্রযুক্তি নির্ভর যুগে, ঘুমের আগে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার কমানো খুবই জরুরি। ফোন, ট্যাবলেট, অথবা কম্পিউটারের স্ক্রিনের নীল আলো আমাদের ঘুমের ক্ষিপ্রতা কমাতে পারে। তাই, ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে এসব ডিভাইস থেকে দূরে থাকা উচিত। রাতের বেলা বই পড়া অথবা মৃদু সংগীত শোনার মতো কার্যকলাপ ঘুমানোর জন্য উপযোগী।
সঠিক ঘুমের অভ্যাস গঠন করার মাধ্যমে আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর করতে পারেন। তাই নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি মানা জরুরি। ঘুমের পূর্বে শিথিল করার প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে মানসিক চাপ কমিয়ে এনে আপনাকে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করবে, যা আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত শুভকর।
ঘুমের মধ্যে ঘুমিয়ে ওঠার পদক্ষেপগুলি
নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি বজায় রাখার ফলে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। গভীর ঘুমে প্রবেশের জন্য প্রথম এবং প্রধান পদক্ষেপ হলো একটি সুশৃঙ্খল রাত্রি সময়সূচি তৈরি করা। ঘুমানোর সময় ঠিক করা এবং সেটি প্রতিদিন মেনে চলা, শরীরের ঘড়ি এবং জৈবিক পদ্ধতির সামঞ্জস্য রক্ষা করে। এটি শরীরের নিদ্রার চক্রকে উন্নত করে এবং গভীর ঘুমে প্রবেশের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
গভীর ঘুমে প্রবেশের জন্য, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে ঘুমানোর আগে কিছু সাধারণ অভ্যাস তৈরি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, শোওয়ার আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার কম থেকে কমানো উচিত, কারণ নীল আলো মেলাটোনিন উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এছাড়াও, রিল্যাক্সেশন টেকনিক যেমন মেডিটেশন বা হালকা স্ট্রেচিং কার্যকরভাবে ঘুমের প্রস্তুতির জন্য উপকারী হতে পারে।
স্বপ্নে প্রবেশ করার কৌশলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চিন্তাভাবনার স্বচ্ছ হওয়া। দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার রেখে, আপনি এবং আপনার মনের আভাস বৃদ্ধি করতে পারেন, যা রাতের সময় স্বপ্নের অভিজ্ঞতাকে উন্নত করে। এছাড়া, ঘুমানোর প্রথম ঘন্টার মধ্যে কোনও কর্মকাণ্ডের পূর্বে আপনি মনের মধ্যে একটি ভাবনা স্থাপন করতে পারেন যা আপনার স্বপ্নের গন্তব্য নির্ধারণ করবে।
মোটকথা, ঘুমের মধ্যে ঘুমিয়ে ওঠার পদক্ষেপগুলি সুসংগঠিত এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী অভ্যাস তৈরি করতে সহায়ক। একটি নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি নিশ্চিত করে যে আপনার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সঠিক থাকবে। ঘুমের এই অভ্যাসগুলির মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে গভীর ঘুম এবং স্বপ্নের অভিজ্ঞতা একটি নতুন মাত্রা পেতে পারে।
ঘুমের অভ্যাসের অসুবিধা: কি করতে হবে?
ঘুমের অভ্যাস বজায় না রাখা জীবনযাত্রায় একাধিক অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে। অব্যবস্থাপনার কারণে বা দৈনন্দিন জীবনের চাপের জন্য যখন ঘুমের সময়সূচি ব্যাহত হয়, তখন এর প্রভাব স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিকেই পড়তে দেখা যায়। ঘুমের অভাব মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যেমন অস্থিরতা, উদ্বেগ ও অবসাদ। এ ছাড়াও শারীরিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস।
যখন ঘুমের অভ্যাস ব্যাহত হয়, তখন শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়ির ওপর প্রভাব ফেলে। এতে শরীরের অন্যান্য কার্যক্রম যেমন বিপাকের হার, হরমোনের নিঃসরণ প্রভৃতি অস্থিতিশীল হতে পারে। বিশেষ করে, রাতে কম ঘুম নিদ্রাহীনতা তৈরি করে, যা পরবর্তীতে মানুষের কর্মক্ষমতা এবং সামগ্রিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, কাজের প্রতি মনোযোগ হ্রাস পায়, এবং সিদ্ধান্তগ্রহণের সক্ষমতা কমে যায়।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রথমত, ঘুমের একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি তৈরি করা উচিত, যেখানে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। দ্বিতীয়ত, ঘুমের পরিবেশকে ভালোভাবে পরিৎকৃন্ত করতে হবে। অন্ধকার, শীতল এবং নীরব পরিবেশ ঘুমনোর জন্য সহায়ক। তৃতীয়ত, সোশ্যাল মিডিয়া বা টেলিভিশনের ব্যবহার সীমাবদ্ধ করতে হবে, বিশেষ করে রাতে। ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করলে, ঘুমের অভ্যাসকে উন্নত করে সুস্থ জীবনযাত্রা অর্জন করা সম্ভব।
ঘুমের জন্য খাদ্য এবং জীবনযাত্রার প্রভাব
মানুষের ঘুমের গুণগত মানের ওপর খাদ্য এবং জীবনযাত্রার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করলে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ই ভালো থাকে, যা ভালো ঘুমের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের তালিকার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ঘুমকে সমর্থন করে, যেমন মিনারেল, ভিটামিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, এবং ফাইবার। উদাহরণস্বরূপ, দুধ এবং দইয়ের মতো দুগ্ধজাত খাবার মধ্যে ট্রিপটোফেন পাওয়া যায়, যা শরীরে মেলাটোনিনের উত্পাদন বাড়াতে সাহায্য করে এবং ঘুমের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
অন্যদিকে, অতিরিক্ত ক্যাফিন এবং অ্যালকোহলের গ্রহণ ঘুমের গুণগত মানকে বিপর্যস্ত করতে পারে। কফি, চা এবং শক্তিশালী পানীয়গুলো ঘুমের আগে গ্রহণ করলে ঘুমের প্রবাহ নিরবচ্ছিন্ন হয় এবং রাতের ঘুমে বিঘ্ন ঘটে। এ ছাড়া, অ্যালকোহলে প্রাথমিকভাবে ঘুম আসলেও এটি পরে জেগে ওঠার এবং অশান্তির সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, ঘুমের সময়সূচি মানলে খাদ্যের পছন্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
এছাড়াও, সঙ্গীর সঙ্গ ঘুমের গুণগত মানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের সঙ্গী শান্ত ও সহযোগী, তাদের ঘুমের জন্য একটি সমর্থক পরিবেশ তৈরী করে। যেন সঙ্গীমণ্ডলীর আশেপাশে থাকা মানসিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্য আসে এবং ভালো ঘুমের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এর বিপরীতে, যদি সঙ্গী ঘুমের মাঝে সমস্যার সৃষ্টি করে, তা ঘুমের চারিত্রিকতা নষ্ট করতে পারে। সুতরাং, একটি স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য খাদ্য এবং সঙ্গীর সঙ্গ দুটোই সমান গুরুত্ব বহন করে যা ঘুমের গুণগত মানের উপর নির্ভর করে।
ব্যায়াম এবং ঘুম: ব্যবহৃত উপযোগিতা
ঘুমের গুণগত মান বাড়াতে ব্যায়াম একটি অপরিহার্য উপাদান। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ সরাসরি আমাদের ঘুমের উপর প্রভাব ফেলে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের মধ্যে ঘুমের সমস্যা কম প্রদর্শিত হয়। শরীরচর্চা যেমন আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, তেমনই এটি ঘুমের মানিকেও উন্নত করে।
বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম রয়েছে যা বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার জন্য উপকারি হতে পারে। যেমন, কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়ামগুলি, যেমন দৌড়ানো বা সাইকেল চালানো, আমাদের উপশমের জন্য উপকারী। অন্যদিকে, যোগাসন এবং মেডিটেশন ধরনের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখতেও সহায়ক।
সঠিক সময়ে ব্যায়াম করার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, দুপুরের সময় অর্থাৎ বিকেল ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে ব্যায়াম করা সবচেয়ে কার্যকর। এই সময়ে শরীরের গঠন এবং শক্তির স্তর সবথেকে উপযুক্ত থাকে। তবে, রাতের শেষ দিকে তীব্র ব্যায়াম করা এড়ানো উচিত, কারণ এটি ঘুমের মাসুলের প্রভাব ফেলতে পারে। জানানো উচিত যে আধুনিক জীবনশৈলীতে বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে শারীরিক কার্যকলাপকে মাঝে মাঝে উপেক্ষা করা হয়। সেক্ষেত্রে, দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট ব্যায়াম যেমন হাঁটা বা স্ট্রেচিং অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
সাধারণভাবে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত ব্যায়াম অত্যাবশ্যক। যদি আমরা আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে ব্যায়ামকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, তাহলে এটি ঘুমের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কম্পিউটার ও প্রযুক্তির প্রভাব
বর্তমান যুগে, প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনযাত্রার অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। কম্পিউটার, স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসের স্থায়ী উপস্থিতি আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে বিশাল পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে, অনলাইনে সময় কাটানো এবং প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার ঘুমের মানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রীনের সামনে বসে থাকার ফলে আমাদের শরীরে নীল আলোর প্রভাব বৃদ্ধি পায়, যা ঘুমের জন্য একটি মূল প্রতিবন্ধকতা।
নীল আলো আমাদের মস্তিষ্কে মেলাটোনিনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, ফলে রাতে ঘুমানোর সময় আসার আগেই আমাদের শরীরকে একটুও বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেয় না। অধিকাংশ লোক সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সময় ব্যয় করে, যা রাতের ঘুমকে প্রভাবিত করে। রাতে ঘুমানোর সময় স্ক্রীন ব্যবহার করার ফলে ঘুমের গুণমান হ্রাস পায় এবং অবশেষে দিনের কর্মক্ষমতায় প্রতিফলিত হয়।
এছাড়াও, নার্ভাস সিস্টেমের উপর প্রযুক্তির প্রভাব দেখায় যে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা প্রায়শই উদ্বেগ ও চাপ অনুভব করি, যা দাগ কাটে আমাদের নিদ্রাজনিত অভ্যাসে। ঘুমের জন্য একটি নিয়মিত সময়সূচি প্রতিষ্ঠা করা সেই অভ্যাসকে পরিবর্তন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। টেকসই এবং স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারে সঠিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি। প্রযুক্তির এই প্রভাবগুলি যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা না হয়, তাহলে আমাদের জীবনযাত্রায় স্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
নিয়মিত ঘুমের সময়সূচির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি অনুসরণ করার ফলে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী উপকারিতা স্বরূপ হতে পারে। গবেষণা অনুসারে, যারা সময়মত এবং পর্যাপ্ত ঘুম নেন, তাদের কাজের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এটি মানসিক তীক্ষ্ণতা এবং মনোযোগ বাড়িয়ে তুলতে সহায়ক হয়, ফলে কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত ঘুমের ফলে সৃষ্ট আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো সৃষ্টিশীলতা; ঘুমের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেওয়া হয়, যা নতুন ভাবনা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়।
শারীরবৃত্তীয় দিক থেকে, পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের স্বাস্থ্যকে দীর্ঘমেয়াদে সমৃদ্ধ করে। নিয়মিত ঘুমের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং হার্টের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যা রোগের ঝুঁকি কমাতেই কার্যকর। ব্যক্তিগত জীবনে, যারা পরিমিতভাবে ঘুমান, তারা সাধারণত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের উন্নতি দেখতে পান। পরিবার এবং বন্ধুদের জন্য সময় বের করার সক্ষমতা বাড়ায়। অপরদিকে, অপর্যাপ্ত ঘুম ব্যক্তিগত সম্পর্কের মানকে হ্রাস করতে পারে।
সমাজের উপরও নিয়মিত ঘুমের সময়সূচির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। যখন ব্যক্তিরা পর্যাপ্ত ঘুম পান, তখন তারা সাধারণত স্বাস্থ্যকর এবং সামাজিকভাবে সচেতন হন। ফলস্বরূপ, তাদের মধ্যে সংঘর্ষের হার কমে যায় এবং সমাজের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়। সমাজের অন্যান্য সদস্যদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা সামগ্রিকভাবে সামাজিক সংহতি তৈরি করে। আসলে, একটি সুস্থ সমাজের জন্য ঘুমের অভ্যাসগুলো অপরিহার্য।
