স্ট্রেসের প্রভাব
স্ট্রেস মানব জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা প্রায় সকলের জীবনে বিভিন্ন মাত্রায় উপস্থিত থাকে। তবে, স্ট্রেসের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এটি শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকে, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা হলো স্ট্রেসের প্রধান দুটি প্রকাশ। উদ্বেগ পরিস্থিতি বা ঘটনার কারণে তৈরি হতে পারে যেখানে ব্যক্তি তার সামর্থ্য বা পরিস্থিতি সম্পর্কে অস্বস্তি অনুভব করে। এই উদ্বেগ দীর্ঘস্থায়ী হলে, এটি বিষণ্ণতার একটি প্রধান কারণ হয়ে উঠতে পারে, যার ফলে জীবনযাত্রার মানও হ্রাস পায়।
শারীরিকভাবে স্ট্রেস শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া ঘটায়। যখন কেউ স্ট্রেসের সম্মুখীন হয়, তার শরীর ফাইট বা ফ্লাইট প্রতিক্রিয়া শুরু করে, যা অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসল নামক হরমোনের উত্পাদনকে বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোনগুলো শরীরের বিভিন্ন কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, যেমন হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ। দীর্ঘমেয়াদী স্ট্রেস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে ফেলে। এর ফলে ব্যক্তি সহজেই বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হতে পারে, যেমন হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস।
স্ট্রেস নিঃসন্দেহে মানুষের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। এটি শুধুমাত্র সমস্যাগুলো সৃষ্টি করে না, বরং আগের থেকেই বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে আরো তীব্র করে তোলে। স্ট্রেসের প্রভাব বোঝা আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আমাদের জীবনের গুণগত মান উন্নত করার একটি মূল চাবিকাঠি। ব্যক্তির জীবনে স্ট্রেস কমানোর উপায় খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা একটি সুস্থ ও সুখী জীবনযাপন করতে পারে।
গভীর শ্বাসযাত্রা
গভীর শ্বাসযাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্ট্রেস একটি সাধারণ সমস্যা, এবং গভীর শ্বাসযাত্রা এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করার একটি কার্যকর পন্থা। যখন আমরা গভীরভাবে এবং ধীরে শ্বাস নিই, তখন শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করে, যা মনোযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করে। এটি আমাদের শরীরে একটি শিথিল অবস্থার সৃষ্টি করে যা স্ট্রেসের প্রভাবকে কমাতে সাহায্য করে।
গভীর শ্বাসযাত্রা প্রক্রিয়াটি শুরু করার জন্য প্রথমে একটি আরামদায়ক স্থানে বসতে হবে। আপনার চোখ বন্ধ করুন এবং আপনার হাতগুলো পেটের উপরে রাখুন। এখন নাসারন্ধ্রের মাধ্যমে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন, যেন আপনার পেট ফুলে উঠে। এই অবস্থায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য শ্বাস ধারণ করুন এবং তারপর ধীরে ধীরে বা মুখ দিয়ে শ্বাস ছেড়ে দিন। এটির পুনরাবৃত্তি করুন। এই পদ্ধতি স্বাভাবিক শ্বাসকষ্টে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কে শান্তির অনুভূতি সৃষ্টি করে।
গভীর শ্বাসযাত্রা কেবলমাত্র মানসিক শান্তিই এনে দেয় না, বরং আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যেও উন্নতি ঘটায়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। অতএব, যখন আপনি স্ট্রেস অনুভব করেন, তখন গভীর শ্বাসযাত্রা অনুশীলন করা একটি সহজ তবে কার্যকর কৌশল হতে পারে। এটি আমাদের জীবনের মান বৃদ্ধির পাশাপাশি স্ট্রেস পরিচালনার ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম
মেডিটেশন এবং যোগব্যায়াম মূলত প্রাচীন ধ্যানপ্রক্রিয়া, যা আমাদের মনের শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী। এই প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার মানসিক চাপ হ্রাস করতে এবং আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিটেশন এবং যোগব্যায়াম নিয়মিত অনুশীলন করলে মানুষের মনোসংযোগ বৃদ্ধি পায় এবং ভাবনা পরিষ্কার হয়।
মেডিটেশন হল এক ধরনের মানসিক অনুশীলন যা চিন্তাধারাকে কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে মনের শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। এটি অন্যায় চিন্তা এবং উদ্বেগ থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি কার্যকরী উপায়। মেডিটেশনের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, যেমন, মনোনিবেশের মেডিটেশন, প্রেমময় দয়া মেডিটেশন, এবং বিশ্রামের মেডিটেশন। এগুলি প্রতিটি ব্যক্তি তার প্রয়োজন ও সুবিধার অনুযায়ী অনুশীলন করতে পারেন।
যোগব্যায়াম, অন্যদিকে, শরীর ও মনে একযোগে কাজ করে। এটি কোনো ভঙ্গিতে শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ এবং ধ্যানের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। যোগব্যায়ামে শরীরের স্থিতিস্থাপকতা, শক্তি এবং সংযোগ বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত যোগব্যায়াম অনুশীলন করলে শরীরের ব্যথা দূর হয় এবং মানসিক স্বচ্ছতা ও শান্তি বৃদ্ধি পায়।
অতএব, মেডিটেশন এবং যোগব্যায়াম স্ট্রেস কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী কৌশল। এগুলি আমাদের মধ্যে প্রশান্তি ও সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই দুটি প্রক্রিয়া আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য, যা আধুনিক জীবনে মানসিক চাপের মোকাবেলার জন্য এক প্রয়োজনীয় হাতিয়ার।
শারীরিক ব্যায়ামের উপকারিতা
শারীরিক ব্যায়াম শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণাসমূহ প্রমাণ করে যে, নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কে “এন্ডরফিন” নামক হরমোন নিঃসৃত করে, যা প্রাকৃতিকভাবে আমাদের মেজাজ উন্নত করে এবং স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। যখন আমরা ব্যায়াম করি, তখন আমাদের শরীরে একাধিক ধরণের হর্মোনের ভারসাম্য বাড়ে, যা আমাদের অনুরাগ এবং উদ্বেগ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যায়ামের মাধ্যমে আমরা শুধু শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করি না, বরং মনোবলও উদ্বুদ্ধ হয়। সপ্তাহে মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যায়ামও আমাদের মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। চলাফেরা, দৌড়, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা—এই সকল ক্রিয়াকলাপ আমাদের স্ট্রেসের প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শারীরিক ব্যায়াম আমাদের দেহের ফিটনেস বজায় রাখার পাশাপাশি আমাদের মনকে চাঙ্গা রাখতে পারে, যা একজন মানুষকে স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, শারীরিক ব্যায়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এটি সামাজিকীকরণকে উত্সাহিত করে। বিভিন্ন ব্যায়াম ক্লাব বা গ্রুপে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা নতুন বন্ধু তৈরি করতে পারি এবং মানসিক চাপের সময়ে সমর্থন খুঁজে পেতে পারি। এর ফলে আমাদের শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, সামাজিক জীবনও উন্নত হয়। তাই বলা চলে, শারীরিক ব্যায়াম আমাদের জীবনে স্ট্রেস কমানোর একটি অমূল্য উপায়। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের মানসিক অবস্থার উন্নতি সাধন করে এবং স্বাভাবিকভাবে আমাদের সচেতনতা বাড়ায়, যা দৈনন্দিন জীবনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
সামাজিক সংযোগ ও মানসিক স্বাস্থ্য
মানুষ হিসেবে আমরা প্রকৃতির অন্তর্গত, এবং আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য অনেকাংশে আমাদের সামাজিক সংযোগের উপর নির্ভর করে। এই সংযোগগুলো আমাদের একসঙ্গে জড়ো করে, আমাদের সহায়তা করে এবং অনেক সমস্যার মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকে, তারা সাধারণত মানসিক লাঘব এবং স্ট্রেস মোকাবিলার ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে থাকে। বন্ধু এবং পরিবারের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা, একাকীত্বের অনুভূতি হ্রাস করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
অন্যরা যখন আমাদের প্রতি সমর্থন দেখায়, তখন আমরা অনুভব করি যে আমাদের ওপর একটি নিরাপদ নেটওয়ার্ক রয়েছে যা সমস্যাগুলো সামলাতে সাহায্য করে। এই সামাজিক সংযোগ আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হ্রাস করতে এবং অনুভূতিজনিত চাপকে কমিয়ে দিতে সহায়তা করে, ফলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য আরও দুইগুণ উন্নত হয়। যখন আমরা কখনো চাপের সম্মুখীন হই, তখন একটি ভালো বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গীর যেকোনো ধরনের সমর্থন আমাদের প্রচুর সাহায্য করতে পারে।
আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, সক্রিয় সামাজিক সম্পর্ক মানসিক স্বাস্থ্যকে সম্প্রসারিত করে। যোগাযোগের মাধ্যমে ভাবনা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করা, নিজেদের প্রতি অন্যদের সহানুভূতি অর্জন করা এবং একে অপরের নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা আমাদের মনোযোগ বাড়াতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এইভাবে, আমাদের সামাজিক সংযোগ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে একটি শক্তিশালী ভিত্তিতে পরিণত করে, যা ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। আপনাকে সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকতে উৎসাহিত করা উচিত যাতে স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গঠন করতে পারেন, এবং এর মাধ্যমে স্ট্রেসের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন।
পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব
মানব জীবনে স্ট্রেস ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল পর্যাপ্ত ঘুম। ঘুমের অভাব মানসিক চাপের মাত্রা বাড়াতে পারে, যার ফলে হতাশা এবং উদ্বেগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, যাকে সার্কাডিয়ান রিদম বলা হয়, তা ঘুমের সৌজন্যে নিয়ন্ত্রিত হয়। যখন আমরা পর্যাপ্ত ঘুম পাই না, তখন এই শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় এবং এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে, ঘুমের অভাব অযাচিত স্ট্রেসের একটি মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, যারা নিয়মিতভাবে পর্যাপ্ত ঘুম নেন, তারা সাধারণত কম মানসিক চাপের শিকার হন। প্রতিদিন ৭ থেকে 9 ঘণ্টা ঘুমের পরিমাণ নিশ্চিত করা হলে, সেই ব্যক্তিরা তাদের দৈনন্দিন চাপের মোকাবিলা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। একটি খারাপ রাতে ঘুমের ফলে ম্যাক্সিমাম কার্যকর্মের ওপর প্রভাব পড়ে, ব্যক্তির শক্তি এবং মনোযোগ কমে যায়, যা স্ট্রেসের অনুভূতিকে বাড়িয়ে তোলে।
মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণাগুলি দেখিয়েছে যে, ঘুমের অভাবে থেরাপির কার্যকারিতা হ্রাস পায়। যখন আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে, তখন স্ট্রেস লেভেল বেড়ে যায়। অতএব, কম ঘুমের ফলে আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে এবং এতে দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেসের দিকেও নজর দিতে হয়। আবার, নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস বজায় রাখলে শারীরিক সুস্থতা বাড়ে এবং মানসিক চাপ মোকাবিলায় সহায়তা করে।
সঠিক খাবারের ভূমিকা
মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক স্বাস্থ্য অবশিষ্টাংশ একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, এবং সঠিক খাবারগুলি স্ট্রেস ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের খাবার তালিকায় যদি টাটকা এবং পুষ্টিকর উপাদানগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাহলে সেটা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে সমর্থন করে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ধারণকারী খাদ্য যেমন মাছ, বাদাম, ও তিসির বীজ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং মানসিক চাপ কমায়।
এছাড়াও, শাকসবজি এবং ফলমূলের মধ্যে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ থাকার কারণে তারা শরীরকে শক্তি যোগায় এবং স্ট্রেসের বিরুদ্ধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে, লেবু, শিমলা মরিচ, এবং কলা স্ট্রেস হরমোনের কার্যকলাপকে নিরোধক করার জন্য পরিচিত। খাদ্য তালিকায় প্রাপ্তিশীল ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যে খাবারগুলি দ্রুত শর্করা প্রদান করে, সেগুলি মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত চিনি এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো শরীরের মধ্যে প্রজ্বলন সৃষ্টি করে এবং মানসিক চাপকে বৃদ্ধি করে। সঠিক খাবার বা পুষ্টি ট্র্যাক করতে, নিয়মিত পানির গ্রহণ অত্যাবশ্যক, যেহেতু জল দেহের বিভিন্ন কার্যক্রমকে স্বাভাবিক রাখে। এটি স্ট্রেস গ্রহণের সময় শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।
অতএব, মানসিক স্বাস্থ্যকে উচ্চভাবে সমর্থন করার জন্য সঠিক খাবার গ্রহণের গুরুত্ব নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য অনস্বীকার্য। খাদ্য ও পুষ্টির বৈচিত্র্য বজায় রেখে মানসিক চাপ মোকাবিলার অন্যতম সেরা পদ্ধতি হলো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস পৌঁছানো।
নিজেকে আগে স্থান দিন
স্ব-যত্ন মানে হল নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া এবং জীবনের চাপের মাঝে নিজস্ব শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের দৈনন্দিন জীবন অত্যন্ত ব্যস্ত এবং প্রায়শই অত্যাধিক চাপের মধ্যে অতিক্রান্ত হয়, যা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। এই কারণে, স্ব-যত্ন হল একটি অপরিহার্য কৌশল, যা আমাদের স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করতে পারে।
নিজের যত্ন নেওয়া শুধুমাত্র শারীরিক চিকিৎসা বা সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নয়, বরং মানসিক শান্তি এবং উত্পাদনশীলতার জন্যও অতি প্রয়োজনীয়। স্ব-যত্নের মাধ্যমে মানুষ তাদের মনের ওপর চাপ কমিয়ে, নিজেদের সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাবার গ্রহণ, যথেষ্ট ঘুম, এবং মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়তাকারী বিভিন্ন কার্যকলাপ, যেমন যোগ বিহার বা মেডিটেশন করা, এই সবই স্ব-যত্নের অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়াও, একান্ত সময় কাটানো, যেমন বই পড়া, প্রিয় গানের সাথে সময় কাটানো বা প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ করা, মানসিক চাপ কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়া, সামাজিক সম্পর্ক নির্মাণ বা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোও সুস্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই সমস্ত কৌশলগুলি প্রয়োগ করলে, মানুষ তাদের অভ্যন্তরীণ শান্তি ফিরে পেতে সক্ষম হয়।
নিজেকে আগ্রহী এবং সুখী রাখা, শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রার জন্য নয়, বরং একজন মানুষের সম্পূর্ণ মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে একক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আত্ম-যত্ন কৌশলগুলি সহজ, কিন্তু সেগুলি প্রভাবশালী হতে পারে। স্ব-যত্নে সঠিক বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল এনে দিতে পারে, যা স্ট্রেসের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসে সাহায্য করে।
অভ্যাস পরিবর্তন ও সংকল্প
স্ট্রেস পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন অভ্যাস গড়ে তোলার গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, কাজের চাপ এবং বাইরের পরিবেশের কারণে স্ট্রেস বেড়ে যেতে পারে। তবে, আমরা যদি সঠিক অভ্যাসগুলি গঠন করতে পারি, তাহলে তা দীর্ঘমেয়াদী স্ট্রেস হ্রাসে সহায়ক হতে পারে। নতুন অভ্যাস গঠন করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হল সংকল্প গ্রহণ। সংকল্প হল একটি সচেতন সিদ্ধান্ত, যা আপনাকে নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে।
প্রথমত, আপনার দৈনন্দিন রুটিনে কিছু ইতিবাচক অভ্যাস যুক্ত করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনাকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটতে বের হতে হবে। এই ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ স্ট্রেস হ্রাসে সাহায্য করে এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। এছাড়াও, মেডিটেশন বা সাইকেল চালানোও আপনার স্ট্রেসের স্তরকে কমাতে কার্যকরী হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, সময় ব্যবস্থাপনায় উন্নতি অপরিহার্য। স্ট্রেস প্রায়শই সময়ের অভাবে হয়। আপনার কাজের জন্য একটি সঠিক পরিকল্পনা করুন। তালিকা তৈরি করে কাজগুলো সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। এটি আপনার চিন্তনকে সংগঠিত করতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ থেকে মুক্তি দেবে।
তৃতীয়ত, সামাজিক সমর্থন অপরিহার্য। আপনার পরিচিতদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মাধ্যমে চাপ হ্রাসে সহায়তা নিতে পারেন। বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে বোধগম্য আলোচনা করলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়। জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন করে অভ্যাস পরিবর্তন ও সংকল্পের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদের স্ট্রেস হ্রাস সম্ভব।
