ভালো ঘুমের গুরুত্ব
ঘুম মানব জীবন আর্থিক স্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ঘুমের অভাব বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতি রাতে ৭-৯ ঘণ্টার ঝরঝরে ঘুম অপরিহার্য। এই ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মস্তিষ্কের কার্যক্রম এবং ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য অত্য Cruise বিবেচিত।
ঘুমের মাধ্যমে শরীর স্বাভাবিক রূপে পুনর্গঠন হয়। ঘুমের সময় দেহ কোষগুলিকে মেরামত করে, যা শরীরের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, যথেষ্ট ঘুমের অভাবে শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়, ফলে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ বাড়তে পারে।
মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে, ঘুমের অভাব উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং মানসিক চাপের নির্গমন বাড়াতে পারে। গবেষকদের মতে, সঠিক পরিমাণে ঘুম মানুষের মনে স্কিল এবং স্মৃতির উন্নতি ঘটায়। যখন আমরা ভালোভাবে ঘুমাই, তখন আমাদের মস্তিষ্ক তথ্য প্রক্রিয়া করে এবং শিখে নেওয়া তথ্যগুলি ঠিকভাবে সংরক্ষণ করে। ঘুমের অভাব আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে সীমিত করে।
শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ঘুমের প্রভাব স্পষ্ট। স্বাস্থ্যের যত্নে ঘুমের গুরুত্ব মোটেই অগ্রাহ্য করার মত নয়। সঠিক ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার একটি অপরিহার্য অংশ। সময়ের সাথে সাথে যদি আমরা ঘুমের মান এবং পরিমাণের দিকে গুরুত্ব না দিই, তাহলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বৈজ্ঞানিক প্রমাণিত ঘুমের উপায়
ঘুমের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত কিছু উপায় রয়েছে, যা নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে কার্যকর ফল দিতে পারে। প্রথমত, নিয়মিত সময় অনুসারে ঘুমাতে যাওয়া এবং ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক গবেষণা দেখিয়েছে, একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ির সাথে সঙ্গতি রেখে ঘুমের গুণগত মান উন্নত করে।
দ্বিতীয় উপায় হিসেবে একটি সুবিধাজনক শোয়ার পরিবেশ তৈরি করা উল্লেখযোগ্য। তাপমাত্রা, আলো এবং শব্দ কমিয়ে শোয়ার ঘরকে আরো আরামদায়ক করা যেতে পারে। প্রশান্ত পরিবেশ ঘুমের গুণমান বৃদ্ধি করে, যা বিভিন্ন শারীরিক ও মেন্টাল স্বাস্থ্য বিষয়ে সহায়ক হয়ে ওঠে।
তৃতীয় উপায়ে শারীরিক কার্যক্রমের মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। নিয়মিত ব্যায়াম করা, বিশেষ করে দিনের প্রথমভাগে, রাতে ঘুম ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের ঘুমের গুণমান তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
চতুর্থ উপায় হলো ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল গ্রহণ কমানো। রাতে ঘুমানোর আগে এই দুইটি উপাদান গ্রহণের ফলে ঘুমের আকার এবং গভীরতা কমে যেতে পারে। গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, দেরিতে ক্যাফিন গ্রহনের ফলে ভাগ্যক্রমে ঘুমে বিঘ্ন ঘটে।
পঞ্চম উপায় হলো মাইন্ডফুলনেস বা মেডিটেশন। নিয়মিত মেডিটেশন শরীরের স্ট্রেস হরমোনকে কমাতে সাহায্য করে, যা ঘুমের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। ষষ্ঠ উপায় হিসাবে, প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত করা অত্যন্ত কার্যকর। ঘুমের সময়ে স্ক্রিনের আলো দূরে রাখতে সাহায্য করে শরীরের মেলাটোনিন উৎপাদনকে প্রতিষ্ঠিত রাখা।
শেষত, খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনা যেতে পারে। রাতের খাবারে ভারী এবং তৈলাক্ত খাদ্য এড়ানো যাওয়া উচিত। এইভাবে, শরীরকে উপযুক্ত বিশ্রামের সময় দেওয়া যায়। সবশেষে, এসব বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপায়গুলোর সমন্বয় ও নিয়মিত অনুশীলন নিশ্চিত করে ঘুমের মান উন্নত করা সম্ভব।
নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী
সঠিক ঘুমের সময়সূচী একটি স্বাস্থ্যকর জীবনের অপরিহার্য অংশ। নিয়মিত ও সঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ওঠা ঘুমের গুণগত মান উন্নত করে এবং এটি আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়ির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। আমাদের শরীরের ঘুমের চক্রগুলি এক ধরনের গোলাকার লুপের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে, যেখানে ঘণ্টা এবং ঘড়ির সময় জানা থাকলে শরীর এই সময়গুলিতে প্রকৃতির সঙ্গে একীভূত হয়। নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী স্থাপন করলে, দেহের অভ্যন্তরীণ ক্লক সঠিকভাবে কাজ করে, যা রাতের সময়ে ঘুমের গভীরতা ও স্থায়িত্ব উন্নত করতে সহায়ক।
এছাড়াও, শরীরের নানাবিধ কার্যক্রম, যেমন হরমোনের নিঃসরণ এবং মেটাবলিজম, নিয়মিত সময়সূচীর মাধ্যমে সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, নিয়মিত সময়ে ঘুমালে করটিসল স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগের অনুভূতি কমিয়ে দেয়। রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া সারা দিন শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
শীর্ষস্থানীয় গবেষণাগুলি নির্দেশ করে যে, যেসব লোক নিয়মিতভাবে একই সময়ে ঘুমান এবং উঠেন, তারা উন্নত মানের ঘুমের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এভাবে, সংগঠিত সময়সূচী যারা মান্য করেন, তারা অনেক বেশি সতেজ এবং কার্যক্ষম থাকে। ঘুমের ঘাটতি, এর বিপরীতে, বিভিন্ন ধরনের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে। অতএব, একটি নিখুঁত ঘুমের সময়সূচী তৈরি করা এবং তা অনুসরণ করা প্রতিটি ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরচর্চা এবং ঘুম
নিয়মিত শরীরচর্চা ঘুমের গুণগত মান উন্নত করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে, যা মানুষ নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপে যুক্ত থাকে, তাদের মধ্যে ঘুমের ব্যাধি অন্তত কমে যায়। শারীরিক কার্যকলাপের ফলে আমাদের শরীরের রক্তসঞ্চালনা বৃদ্ধি পায় এবং এটি আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আমাদের দেহে উৎপন্ন এন্ডোরফিন এবং অন্যান্য হরমোনগুলি মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে, যা ঘুমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রতিদিনের শারীরিক কার্যকলাপ, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, বা জিমে শরীরচর্চা, আমাদের দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। ঘুমের সময় দেহের তাপমাত্রা কমে যায় এবং এ সময়ের প্রস্তুতি নেয়। তাই দিনভর শরীরচর্চা করার পরে যখন আমরা ঘুমাতে যাই, আমাদের দেহের তাপমাত্রা কমানোর প্রক্রিয়া আরো সহজ হয়ে যায়, ফলে ঘুমের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
শরীরচর্চার সময় আমাদের শরীরে যেসব উত্তেজক পদার্থ তৈরি হয়, তা আমাদের মানসিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। একটি শক্তিশালী মন, আরো ভালো আগে থাকা পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়, যার ফলে ঘুমের মান উন্নত হয়। বিভিন্ন গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, সপ্তাহে অন্তত 150 মিনিটের মাঝারি দৈর্ঘ্যের শারীরিক কার্যকলাপ, যেমন দ্রুত হাঁটা বা সাইকেল চালানো, ঘুমের দীর্ঘায়ু এবং মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
সুতরাং, নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তোলা ঘুমের খারাপ সমস্যাগুলি দূর করতে এবং সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে ঘুমের সঠিক গুণ গড়ে তোলা সম্ভব এবং এর ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পারফরম্যান্স এবং স্বাস্থ্যও উন্নত হয়।
ডায়েট এবং ঘুমের সম্পর্ক
মানুষের খাদ্যাভ্যাস এবং ঘুমের গুণগত মানের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য নিদ্রার গুণ এবং দৈর্ঘ্যকে প্রভাবিত করে। কিছু খাবার যেগুলি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, সেগুলি বিশেষভাবে ঘুমকে উন্নত করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন বাদাম ও সবুজ শাক, দেহের স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করতে সহায়তা করে, যা ব্যক্তির ঘুমের মান ভালো করে।
অন্যদিকে, ক্যাফিনযুক্ত পানীয় যেমন কফি ও চা, নিদ্রার প্রাকৃতিক চক্রকে বিঘ্নিত করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্যাফিনের আধিক্য দেহের ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি হরমোন, ম্যেলাটোনিনের উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে, যারা সুস্থ ঘুম চান, তাদের জন্য ক্যাফিন সীমিত বা পরিহার করা উচিত।
এছাড়াও, ঘুমকে উন্নত করতে সহায়তা করে এমন কিছু খাবারের মধ্যে রয়েছে টার্কি, ব্যানানা এবং দই। টার্কির মধ্যে ট্রিপটোফ্যান নামে একটি অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন উৎপাদনে সহাযক। পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম যোগাতে পারে এমন ব্যানানাও ঘুমের জন্য উপকারী। এছাড়া, দই এক প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক যা পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক, যা পরোক্ষভাবে ঘুমের মানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
যদিও ঘুমের গুণমানকে শুধুমাত্র খাদ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করা যায় না, তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এই প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুষম খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত জলপানও মাথায় রাখতে হবে, কারণ শরীরের ডিহাইড্রেশন ঘুমের গুণমানকে কমাতে পারে। এই কারণে, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করে ঘুমের মান উন্নত করা সম্ভব, যা আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বিরাট ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
শোয়ার পরিবেশের গুরুত্ব
গভীর ও সুস্থ ঘুমের জন্য শোয়ার পরিবেশ একটি অপরিহার্য উপাদান। সঠিক পরিবেশ গঠন করতে হলে আলো, শব্দ, তাপমাত্রা এবং বিছানার কার্যকারিতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। প্রথমে আলো নিয়েই আলোচনা করা যাক। ঘুমের জন্য অন্ধকার পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, কোমল আলো ঘুমের গুণগত মানকে প্রভাবিত করতে পারে। এ কারণে, রাতে শোয়ার ঘরটিকে অন্ধকার রাখা এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের আলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
শব্দও ঘুমের মানকে প্রভাবিত করে। শক্তিশালী বা অবাঞ্ছিত শব্দগুলি দ্রুত ঘুম ভাঙাতে পারে এবং গভীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। অতিরিক্ত শব্দ এড়াতে, শোয়ার ঘরের দরজা বন্ধ রাখতে এবং সম্ভব হলে শব্দ গ্রহণকারী ফেনা বা প্যাড ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ।
এছাড়া, তাপমাত্রাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, ঘুমানোর জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ১৯-২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই টেম্পারেচার সীমার মধ্যে রাখতে পারলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে, যা গভীর ঘুমে সহায়ক। অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা থাকা, স্বাভাবিক ঘুমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
অবশেষে, বিছানা ও ম্যাট্রেসের কার্যকারিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি আরামদায়ক এবং সমর্থিত বিছানা ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। মেমরি ফোম বা ল্যাটেক্স ম্যাট্রেসের মতো উপাদানগুলি শরীরকে সঠিকভাবে সমর্থন করে, ফলে ঘুমের সময় আরাম এবং বিশ্রামের অনুভূতি বাড়ে।
সুতরাং, শোয়ার পরিবেশের উপাদানগুলো যথাযথভাবে প্রস্তুত করে সহজেই সুষ্ঠু ও বিশ্রামদায়ক ঘুম নেওয়া সম্ভব।
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
মানসিক চাপ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে একটি সাধারণ এবং অপ্রতিরোধ্য অভিজ্ঞতা। যদিও এটি স্বাভাবিক, তবে উচ্চ স্তরের চাপ ঘুমের গুণগত মানে গুরুত্বপূর্ণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্ট্রেস হরমোনের উচ্চ মাত্রা শরীরের ভেতরকার প্রক্রিয়াগুলোতে ব্যাঘাত ঘটায়, দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করে, যা ঘুম না আসার কারণ হতে পারে। তাই, মানসিক চাপের যথাযথ ব্যবস্থাপনা ঘুমের উন্নতির জন্য অপরিহার্য।
স্ট্রেস কমানোর কার্যকরী পদ্ধতিগুলোর মধ্যে প্রথমত ধ্যান বা মাইন্ডফুলনেস একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। নিয়মিত ধ্যান অনুশীলন করলে এটি মস্তিষ্কের চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং ঘুমের মান উন্নত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ধ্যান করেন, তারা অধিক শান্তিপূর্ণ ঘুমের অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
দ্বিতীয়ত, শারীরিক ব্যায়াম করা একটি অপরিহার্য উপায়। এটি শরীরের প্রচুর চাপ মুক্ত করে, মনকে শান্ত রাখে এবং অনিদ্রার সমস্যা সমাধান করে। বিশেষ করে ইউজেনিক্স এবং যোগব্যায়ামের মতো প্রশিক্ষণগুলোর মাধ্যমে ইনসোমনিয়ার সমস্যায় উপশম পাওয়া যায়।
অন্য একটি কার্যকরী পদ্ধতি হলো সঠিক সময়ের মধ্যে খাদ্যগ্রহণ করা। রাতে ভারি বা তেল মুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে মাইক্রোস্লিপ তৈরি হয়ে যায় যা ঘুমের মানকে কমায়। খাবারের জন্য উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করলে এটা স্ট্রেস কমাতে এবং ঘুমের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করে।
সবশেষে, ভিন্ন ভিন্ন শিথিলকরণ কৌশল, যেমন সংগীত শোনা বা গরম পানির গোসল, মানসিক চাপ কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। এই পদক্ষেপগুলো মানসিক চাপ কমিয়ে এনে ঘুমের গুণগত মানের উন্নতিতে সহায়ক হয়।
টিকটক ও প্রযুক্তির প্রভাব
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া এবং প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে ঘুমের ওপর। বিশেষ করে টিকটক এবং অন্যান্য ভিডিও প্ল্যাটফর্মগুলি, যা ঘুমের সময়ে চিত্তবিনোদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যার পর একটি স্মার্টফোনে ভিডিও দেখার অভ্যাস ঘুমের মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, রাতে স্ক্রীনের আলোর সংস্পর্শে আসা মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করে, যা রাতের ঘুমের জন্য অপরিহার্য।
টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহারকারীদের জন্য আকর্ষণীয় এবং বিনোদনমূলক, কিন্তু এতে ভিডিও দেখার সময়ের সীমা থাকেনা। একই সময়ে, এটি একটি অসঙ্গতিপূর্ণ ঘুমের চক্র সৃষ্টি করতে পারে। যেহেতু শরীরের মস্তিষ্ক উৎসাহিত থাকে, তাই রাত্রি গভীর হওয়ার পরও ব্যবহারকারীরা তাদের চোখ খুলে রাখতে নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। এ কারণে প্রয়োজনীয় ঘুমের সময় একাধিক ঘন্টার জন্য কমে যায়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, অধিক সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে ঘুমের ব্যাহততা এবং অনুভূতির সমস্যা বাড়তে পারে।
এছাড়াও, প্রযুক্তির অব্যাহত উত্থান এবং ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার বিশেষভাবে উদ্বেগ তৈরি করছে। ঘুমের জন্য অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রযুক্তি বন্ধ রাখা ঘুমের মান উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। এ ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তোলার মাধ্যমে, ব্যবহারকারীকে সাহায্য করা সম্ভব যেন তারা রাতে ব্যবহৃত ডিভাইসের সময়সীমা নির্ধারণ করে, যাতে তারা দক্ষতার সাথে বিশ্রামের সময় পাচ্ছে। একইসাথে, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ঘুমের অভ্যাস উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
উপসংহার ও পরামর্শ
ভালো ঘুম মানুষের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বোক্ত সাতটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপায়গুলো অনুসরণ করে, ব্যক্তি সহজেই তাদের ঘুমের গুণমান উন্নত করতে পারেন। প্রথমত, একটি নির্দিষ্ট শৃঙ্খলা মেনে চলে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো এবং জাগা, শারীরিক কালের সাথে শরীরের অভ্যস্ততা তৈরি করে। দ্বিতীয়ত, ঘুমের পরিবেশের আরামদায়কতা নিশ্চিত করা, যেমন একটি নিখুঁত গদি এবং অন্ধকার ঘর, ঘুমের সময়কাল এবং তার গুণমান বাড়ায়।
তৃতীয়ত, ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ঘুমের হানি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মৌলিকভাবে রাতের বেলা এই সকল দ্রব্যের ব্যবহার কমাতে পরামর্শ দেন। চতুর্থত, শারীরিক গতিশীলতা রাখার মাধ্যমে, অর্থাৎ নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ঘুম আরও উন্নত হয়।
পঞ্চমত, মন শান্ত রাখা এবং চাপ ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলি গ্রহণ করা, যেমন যোগব্যায়াম বা ধ্যান, ঘুমের মান উন্নত করতে সহায়ক হয়। ষষ্ঠত, খাদ্যাভ্যাসের উপর মনোযোগ দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা, বিশেষ করে আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ ভিটামিনগুলি, ঘুমের জন্য সহায়ক।
সবশেষে, প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত করা, বিশেষ করে যেসব যন্ত্র থেকে নীল আলো নির্গত হয়, ঘুমের আগে এটি একান্ত জরুরি। একত্রে, উল্লিখিত সব উপায় পাঠকদের কার্যকরী কামনা এবং শুভ ঘুম নিশ্চিত করবে। এভাবে, প্রতিদিনের নিয়মিত অভ্যাস এবং জীবনের মান বাড়িয়ে তুলতে পারলে, সবাই ভালো ঘুমের অভিজ্ঞতা লাভ করতে সক্ষম হবেন।
