স্ট্রেস কমিয়ে ঘুম বাড়ানোর কার্যকরী মেডিটেশন টেকনিক

0 comments 18 views 9 minutes read

মেডিটেশন এবং ঘুমের মধ্যে সম্পর্ক

মেডিটেশন এবং ঘুমের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান, যা সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। মেডিটেশন মনশক্তি এবং শারীরিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করার একটি কার্যকরী উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যখন একজন ব্যক্তি নিয়মিত মেডিটেশন করে, তখন তার মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের মাত্রা হ্রাস পায়, যা ঘুমের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে। ঘুমের গুণগত মানের উপর মেডিটেশনের পজিটিভ প্রভাবগুলি আজকাল বেশি প্রতীয়মান হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিটেশন করার ফলে হৃদযন্ত্রের ধড়াকনাসহ অন্যান্য শারীরিক লক্ষণ স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে, ফলে গভীর ও প্রশান্তিদায়ক ঘুম সম্ভব হয়।

উত্তেজনা এবং উদ্বেগের কারণে অনেকেই ঘুমাতে সমস্যার সম্মুখীন হন। মেডিটেশন অনুশীলন করার মাধ্যমে ব্যক্তিরা নিজেদের মনকে শান্ত করে, যা ফলস্বরূপ ঘুমে সহায়ক হয়। গবেষণায় দেখা যায়, যারা মেডিটেশন করে, তাদের ঘুমের সময়কাল বৃদ্ধি পায় এবং রাত্রির ঘুমের গুণগত মান উন্নত হয়। এর ফলে তারা সকালে তাজা এবং প্রাণবন্ত অনুভব করেন। এটি নির্দেশ করে যে, মেডিটেশন শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, বরং শারীরিক স্বাস্থ্য এবং ঘুমের জন্যও অতি গুরুত্ত্বপূর্ণ।

সাধারণত, মেডিটেশন কয়েকটি বিশেষ কৌশলে সম্পন্ন করা হয়, যা মনোযোগকে সঙ্গবদ্ধ করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপকে স্থিতিশীল করে। এই অবস্থায়, শরীরের স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমে যায়, যা গভীর ঘুমের জন্য উপকারী। পর্যাপ্ত ঘুমের সাথে মেডিটেশনের নিয়মিত অভ্যাস amalgamating করে, ব্যক্তি তাদের মানসিক স্থিতিশীলতা এবং ঘুমের গুণমানকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারেন।

স্ট্রেস কেন ঘুমের মান নষ্ট করে?

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া যা বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে উদ্ভূত হয়। যখন একজন ব্যক্তি অত্যधिक উদ্বেগ বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন, তখন এটি শরীরের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে। বিশেষত, স্ট্রেস হরমোন কোরটিসলের স্তর বৃদ্ধি পায়, যা একটি প্রধান কারণ ঘুমের ব্যাঘাতের। উচ্চ কোরটিসল স্তরের কারণে শরীর শরীরবৃত্তীয়ভাবে উত্তেজিত হয়ে যায়, যা সঠিকভাবে ঘুমানো কঠিন করে তোলে।

মানসিক চাপের ফলে উৎপন্ন উদ্বেগ অনুভূতি ঘুমের গুণমানকে প্রভাবিত করে। উদ্বেগজনক চিন্তার কারণে অনেকের রাতে ঘুমানোর সময় মাথায় নানা ধরনের চিন্তা ছুটে চলে, যা ঘুমের স্থায়িত্ব কমায়। এই অবস্থায়, ঘুমের সময়কাল সঙ্কুচিত হতে পারে এবং গভীর ঘুমে যেতে সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, স্ট্রেসের ফলে ঊর্ধ্বতন সহায়তা কেন্দ্র বিজড়িত হয়ে জরুরি পরিস্থিতির মতো কাজ করায় এটি ঘুমের জন্য অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানসিক চাপের কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা, যেমন মাথাব্যথা, পেশির টান, এবং হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হতে পারে, যা ঘুমের মান বাড়ানোর জন্য আরও একটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের কারণে প্রতিরোধক এবং গুণগত ঘুম হারানো অনেক সাধারণ বিষয়। ফলে, যারা উদ্বিগ্ন এবং চাপগ্রস্ত তারা সাধারণত ঘুমের সমস্যার শিকার হয়ে থাকেন। চাপমুক্ত হওয়া এবং সুষ্ঠু ঘুম নিশ্চিত করতে যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মেডিটেশনের বিভিন্ন প্রকার

মেডিটেশন, মানসিক শান্তি এবং সুস্থতা অর্জনে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। এর বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি এবং কৌশল রয়েছে, যা মানুষ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে। এই বিভাগে সচরাচর ব্যবহৃত কিছু জনপ্রিয় মেডিটেশন পদ্ধতির পরিচিতি প্রদান করা হবে।

প্রথমেই আলোচনা করা যাক মনোযোগ কেন্দ্রিত মেডিটেশন (Concentration Meditation)। এই পদ্ধতিতে একজন ব্যক্তি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা বস্তুর দিকে মনোযোগ প্রদান করেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি তার শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। এটি মনকে একাগ্র করে, চিন্তার জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে, মানসিক চাপ কমে যায় এবং ঘুমের উন্নতি হয়।

এরপর আছে ধারনা মেডিটেশন (Mindfulness Meditation)। এই প্রকরণে, একজন ব্যক্তি তার অনুভূতি, ভাবনা এবং বর্তমান মুহূর্তের প্রতি সচেতন থাকেন। এজন্য কোনও নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে মন নিবদ্ধ করতে হয় না, বরং উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতার দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। এটি মানসিক স্বাভাবিকতা ও শিথিলতা প্রদান করে, যা স্ট্রেস কমাতে সহায়ক।

শক্তি মেডিটেশন (Energy Meditation) হল একটি তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি। এই পদ্ধতিতে, একে অপরের মধ্যে শক্তির প্রবাহের প্রকৃতি বুঝতে চেষ্টা করা হয়। এটি শরীর এবং মনকে পুনরুজ্জীবিত করে, কাজে উৎসাহ প্রদান করে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। এই ধরনের মেডিটেশন শরীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শক্তির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে, ফলে রিল্যাক্সেশন এবং ঘুমের গুণগত মান উন্নত হয়।

উপরোক্ত বিভিন্ন মেডিটেশন পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে এবং মানুষ তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে এগুলি ব্যবহার করছে। প্রত্যেক পদ্ধতির নিজস্ব উপকারিতা রয়েছে, যা ব্যক্তি বিশেষের প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী উপযুক্ত হতে পারে।

ঘুমানোর আগে মেডিটেশন করার সময়সূচী

স্বাস্থ্যকর ঘুম নিশ্চিত করার জন্য, মেডিটেশন করার একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচী তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের নৈতিকতার পাশাপাশি শারীরিক এবং মানসিক অবস্থাকেও উন্নত করে। প্রথমত, দিনের শেষের দিকে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা উচিত, যেখানে আপনি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মেডিটেশন করতে পারবেন। সন্ধ্যা বা রাতের দিকে এই কার্যক্রমটি শুরু করলে, তা আপনার ঘুমানোর প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করবে।

কোনো নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন করার সময়, ব্যক্তিগত রুটিন এবং শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিনের ব্যস্ততার পর, সন্ধ্যা সাত টা থেকে আট টা এমন একটি সময় হতে পারে, যখন আপনি শিথিল হয়ে মেডিটেশন করতে পারেন। এই সময়কালটি দিনের চাপ মুক্ত করার জন্য এবং এর ফলে মনকে প্রস্তুত করার জন্য সহায়ক হয়।

কিছু গবেষণা প্রদর্শন করে যে, মেডিটেশন করার আগে কিছু প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন, যা মনকে প্রশান্ত ও খোলামেলা করে। এটি মেডিটেশন সফল করতে ভূমিকা রাখে। মেডিটেশন করার জন্য নির্ধারিত সময় পার করার পর, কিছু সময় যোগ ব্যায়াম অথবা হালকা স্ট্রেচিংও করতে পারেন। এটি শরীর ও মনে আরও প্রশান্তি এনে দিবে, যা ঘুমানোর সময়সীমা বাড়ানোর জন্য সহায়ক হবে।

মেডিটেশন পদ্ধতিগুলো থেকে আপনি মানসিক চাপ কমিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে পারবেন। নিয়মিত এই সময়সূচী অনুসরণ করলে, আপনাকে ঘুমানোর আগে মেডিটেশন করার উপকারিতা অনুভব হবে। এটি দীর্ঘমেয়াদী ফলোশীল এবং স্বাস্থ্যকর উভয় ধরনের ঘুম উন্নত করতে জোরালোভাবে সাহায্য করবে।

মেডিটেশনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি

মেডিটেশন একটি কার্যকরী প্রক্রিয়া, যা আমাদের মানসিক শান্তি ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এই প্রক্রিয়ার সফলতা নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথমত, আলোর স্তর উপযুক্ত হওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা আবশ্যক। স্বাভাবিক সূর্যের আলো পরিবেশে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যদি সূর্যালোক প্রবাহিত করার সুযোগ না থাকে, তাহলে নরম আলো বা মোমবাতির আলো ব্যবহারের মাধ্যমে একটি নরম ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা যেতে পারে।

এছাড়া, শব্দের স্তরও মেডিটেশনের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ। শান্ত পরিবেশ তৈরি করার জন্য ব্যাকগ্রাউন্ডে অস্বস্তিকর শব্দের পরিমাণ কমিয়ে ফেলা উচিত। একটি নিস্তব্ধ ঘর বা মৃদু সুরের মিউজিক, যেমন প্রাকৃতিক শব্দ বা ধ্যান মিউজিক, শোনা যেতে পারে। এই ধরনের শব্দমালা আমাদের মনকে শান্ত করতে এবং গভীর একাগ্রতার দিকে নিয়ে যেতে সহায়তা করে।

শূন্যস্থান বা স্থান দ্বারা ঘিরে থাকা একটি স্থানও মেডিটেশনের জন্য অপরিহার্য। মেডিটেশন চলাকালীন আমাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে মুক্ত হতে হয়। তাই এমন একটি স্থান নির্বাচন করুন যেখানে আপনার চারপাশে আবদ্ধতা না থাকে। একটি স্বচ্ছ পরিবেশ, যেখানে প্রচুর বাতাস প্রবাহিত হয় এবং জড় পদার্থ কম থাকে, সেই স্থানটি মেডিটেশনের জন্য উপযুক্ত। এখানেই শান্তি অনুভব করা সম্ভব, যা গভীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রক্রিয়াকে সহজতর করে। এই সব উপাদান মিলিয়ে মেডিটেশনকে একটি ইতিবাচক অভিজ্ঞতায় পরিণত করার জন্য অপরিহার্য।

মেডিটেশন করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ

মেডিটেশন একটি শান্তিপূর্ণ এবং কেন্দ্রীভূত অভিজ্ঞতা তৈরির জন্য কিছু বিশেষ উপকরণের প্রয়োজন হতে পারে। এই উপকরণগুলি ব্যাপকভাবে আপনার অভ্যাসকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে এবং মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রথমত, একটি যোগব্যায়ামের ম্যাট নির্বাচনের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এটি বিশেষভাবে তৈরি হয় যাতে আপনি আরামদায়কভাবে বসতে বা শুয়ে থাকতে পারেন। একটি ভালো ম্যাট স্লিপ প্রতিরোধ করে এবং আপনার শারীরিক অঙ্গভঙ্গিকে সঠিকভাবে সমর্থন করে, ফলে মেডিটেশন করার সময় শান্তি অনুভব করা সহজ হয়।

নির্বাচিত আরামদায়ক পোশাক মেডিটেশন অভ্যাসকে অধিক সহজ এবং নির্বিঘ্ন করে। সুতি বা লিনেনের মতো প্রাকৃতিক ফ্যাব্রিক ব্যবহার করা উচিৎ, যা শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি দেয় এবং সংকোচের অনুভূতি মোকাবেলা করতে সহায়ক হয়। একটি রিল্যাক্সিং পোশাক যেমন, পাতলা শার্ট বা ট্রাউজার আপনাকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সহায়তা করে।

শান্ত সঙ্গীত বা প্রকৃতির সুর মেডিটেশনের পরিবেশকে আশ্রয়দায়ক করে। এর ফলে মানসিক চাপ কমানো এবং গভীরতা এবং শীতলতা অনুভব করা সম্ভব হয়। সাঙ্ঘাতিক সঙ্গীত, যেমন শ্রীঙ্কল সঙ্গীত বা প্রকৃতির ধ্বনি, মেডিটেশন করার সময় এমন একটি আবহ তৈরি করতে সহায়ক, যা আপনাকে মনোযোগ নিতে অনুপ্রাণিত করে।

অবশেষে, একটি নিরিবিলি এবং শান্ত পরিবেশ তৈরির জন্য, আলো এবং ঘর সাজানোর বিষয়েও মনোযোগ দেয়া উচিত। আলো কমানোর পাশাপাশি, ক্যান্ডেল বা বোদ্ধ বস্তু ব্যবহার করে একটি স্নিগ্ধ পরিবেশ তৈরি করা বেশি কার্যকর। এই উপকরণের সঠিক নির্বাচন ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মেডিটেশন অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করা সম্ভব।

স্বাভাবিক মেডিটেশন কৌশল

আপনার জীবনে স্ট্রেস কমানোর এবং শান্তি আনতে মেডিটেশন এক কার্যকরী উপায়। তবে, পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য মেডিটেশন প্রযুক্তির কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সাধারণত মহিলা ও পুরুষের শারীরিক এবং মানসিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। এই পার্থক্যগুলি তাদের মেডিটেশন গ্রহণের অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

মহিলা এবং মেডিটেশন

মহিলাদের জন্য মেডিটেশন প্রক্রিয়া প্রায়শই অনুভূতিশীল এবং অন্তর্দৃষ্টিমূলক। তারা পরিস্থিতি বুঝতে এবং নিজেদের ইমোশনাল স্টেট সম্পর্কে অবগত হতে বেশি পছন্দ করে। ফলে, মহিলা মেডিটেশন করার সময় কথ্য মেডিটেশন, যেমন ‘গাইডেড মেডিটেশন’ বা ‘ভিজুয়ালাইজেশন’, বেছে নেন। এই ধরনের মেডিটেশন তাদের পুরানো ধ্যান পদ্ধতের মাধ্যমে বিশ্রাম পেতে সহায়ক হয় এবং তারা গভীর মানসিক শান্তি অর্জনে সক্ষম হন।

পুরুষ এবং মেডিটেশন

পুরুষেরা সাধারণত বেশি কৌশলগত এবং বাস্তবমুখী। তাই, তারা মেডিটেশন করার সময় ‘মাইন্ডফুলনেস’ অথবা ‘ব্রেথিং মেডিটেশন’ পদ্ধতি বেশি ব্যবহার করে। এই কৌশলগুলো তাদের শরীরের আয়নায় রক্ষায় সহায়ক হয়ে কাজ করে এবং তারা বাস্তবিক পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। গবেষণাগুলো দেখায় যে, পুরুষেরা এই ধরনের মেডিটেশন পদ্ধতিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং এর মাধ্যমে তারা স্ট্রেস কমাতে সক্ষম হন।

অলাভজনক কর্মপদ্ধতি

যদিও পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য মেডিটেশন পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, এটি উভয়ের জন্যই এতটা ফলপ্রসূ যে, তারা তাদের জীবনযাপনের ধরন অনুযায়ী কৌশলটি বেছে নিতে পারে। একটি ব্যক্তিগত শৈলী যা তাদের জন্য কার্যকরী, সেটাই হচ্ছে সঠিক মেডিটেশন পদ্ধতি। ব্যক্তির শারীরিক অবস্থান, অভিজ্ঞতা, এবং মানসিকতাকেও এটির কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে।

বিজ্ঞানসম্মত গবেষণার ভিত্তিতে সফলতা

মেডিটেশন, বা ধ্যান, আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সক্ষম। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মেডিটেশন অনিদ্রা এবং ঘুমের খারাপ মানের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। একটি উল্লেখযোগ্য গবেষণায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৫৫ জন অংশগ্রহণকারীর উপর একটি পরীক্ষা পরিচালনা করেন। পরীক্ষায় তাদেরকে একটি ৮ সপ্তাহের মেডিটেশন প্রোগ্রামে অংশ নিতে বলা হয়েছিল। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, তাদের ঘুমের সময়সীমা এবং ঘুমের গুণমান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, পাশাপাশি উদ্বেগ ও চাপও কমেছে।

অন্য একটি গবেষণায়, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের বিজ্ঞানীরা মেডিটেশন প্রক্রিয়ার ফলে মানব মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী মিলে ৪৩% বেশি মায়া এবং ৫৭% কম উদ্বেগ অনুভব করেছেন। যা স্পষ্ট করে জানায় যে, মেডিটেশনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের সময় বাড়ানো যেতে পারে, এমনকি এটি শরীরের স্বাভাবিক ছন্দগুলোকে পুনর্বহাল করার ক্ষেত্রেও সহায়ক।

এছাড়া, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী মেডিটেশন পদ্ধতিতে আগ্রহ বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্ট অনুযায়ী, মেডিটেশন নিয়মিতভাবে চর্চা করা হয়েছে, এবং এর সুফল স্বীকার করার কারণে অনেক মানুষ ঘুমের সমস্যাগুলো মোকাবেলার জন্য এই পদ্ধতির দিকে যাচ্ছেন। শরীর ও মনের সঠিক ভারসাম্য বৃদ্ধি করার জন্য মেডিটেশন একটি বৃহৎ ভূমিকা রাখে যা একান্তভাবে ঘুমের গুণমান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

মেডিটেশন দিয়ে নিয়মিত ঘুমের রুটিন গঠন

জীবনে চাপ, উদ্বেগ এবং নানা চিন্তার কারণে অনেকেই নিয়মিত ঘুমের রুটিন গঠন করতে সক্ষম হন না। তবে, মেডিটেশন একটি কার্যকরী উপায় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে, যা ঘুমের মান এবং রুটিনকে সুসংগঠিত করতে সহায়তা করে। মেডিটেশন শুধুমাত্র মানসিক শান্তি প্রদান করে না, বরং এটি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাত্রা গঠনে অবদান রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মেডিটেশন অনুশীলন করা ব্যক্তি সাধারণত ভালো ঘুমের অভিজ্ঞতা লাভ করে।

মেডিটেশনের মাধ্যমে চিন্তার উৎসাহীতা হ্রাস পায়, যা ঘুমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। একাধিক ধরণের মেডিটেশন রয়েছে, তবে বিশেষ করে mindfulness মেডিটেশন, যা বর্তমান মুহূর্তের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে। এই ধরণের মেডিটেশন অনুশীলনের ফলে, ব্যবহারকারী অযথা চিন্তা এবং উদ্বেগকে দূরীকরণ করতে সক্ষম হন, ফলে নীরবতার মধ্যে স্থিরতা লাভ করেন এবং ঘুমের জন্য একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় মানসিক অবস্থায় প্রবেশ করতে পারেন।

একটি নিয়মিত মেডিটেশন অনুশীলনের মাধ্যমে রাতে ঘুমানোর আগে কিছু সময় নির্ধারণ করে, শিথিল হতে সাহায্য করতে পারে। এটি শরীরের এবং মনের চাপ কমাতে সাহায্য করবে, ফলে ঘুমের সময় ঘনিষ্ঠতর এবং স্থায়ী হয়। এভাবে, মেডিটেশন কেবল একটি অভ্যাস নয়, বরং এটি এক ধরনের জীবনযাত্রার পরিবর্তন। যারা নিয়মিত মেডিটেশন করবেন, তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের উন্নতি ঘটার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

Leave a Comment

About Me

Welcome to Farhan’s Thought

Welcome to Farhan’s Thought

আমি Farhan M Shujon। আমি লিখি মোটিভেশন, অভ্যাস গঠন, মানসিক স্বাস্থ্য আর জীবন বদলের গল্প নিয়ে। প্রতিদিন নতুন অনুপ্রেরণা পেতে আমাদের সাথে থেকো।

Newsletter

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

Top Selling Multipurpose WP Theme

স্ট্রেস কমিয়ে ঘুম বাড়ানোর কার্যকরী মেডিটেশন টেকনিক

0 comments 18 views 9 minutes read