অশ্বগন্ধার পরিচয়
অশ্বগন্ধা, যা অ্যাসিন্থাস সোমনিফেরার (Withania somnifera) নামে বৈজ্ঞানিকভাবে পরিচিত, একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গাছ। এটি সোলানাসি পরিবারভুক্ত এবং সাধারণত উপকৃত হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ভারত, মধ্যপ্রাচ্য এবং কয়েকটি আফ্রিকার দেশগুলি অশ্বগন্ধার প্রাকৃতিক জন্মস্থল। এই গাছটি প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পায় এবং হলুদ ফুলের উপরিভাগ ছড়িয়ে দেয়।
ঐতিহাসিকভাবে, অশ্বগন্ধা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আদিকাল থেকে এই গাছটির শেকড় বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং এটি শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসাবে পরিচিত। আয়ুর্বেদে এটি “রাজতম্বুল” বা “অশ্বগন্ধা” নামে পরিচিত, যার অর্থ “ঘোড়ার গন্ধ”, কারণ গাছটির শিকড়ের গন্ধ কিছুটা তীব্র।
অশ্বগন্ধার বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, যেমনঃ শীতল, উষ্ণ এবং মাঝারি প্রকার। প্রত্যেক প্রকারের বৈশিষ্ট্য ও কার্যকারিতা আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, শীতল প্রকারের অশ্বগন্ধা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, আর উষ্ণ প্রকারের অশ্বগন্ধা শক্তি ও উদ্যম বৃদ্ধি করতে পারে। গাছটি ভারতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এবং কৃষকেরা সাধারণত এটি নিজেদের বাগানে উৎপাদন করেন। অশ্বগন্ধার নানা উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এর সঠিক ব্যবহারের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
অশ্বগন্ধার পুষ্টি উপাদান
অশ্বগন্ধা, যা Mostly known as Withania somnifera, একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ গাছ যা দীর্ঘকাল ধরে ভারতীয় ayurvedic চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমৃদ্ধ উৎস, যা মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারে আসে। প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এবং মিনারেলস, পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য জৈবিক উপাদান।
ভিটামিনের মধ্যে, অশ্বগন্ধায় Vitamin A, C, এবং E এর উপস্থিতি রয়েছে। Vitamin A চক্ষুর স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে, C শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং E অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা কোষের ক্ষয় রোধ করে। এছাড়া, এতে রয়েছে B কমপ্লেক্সের সদস্য যেমন B2, B3 এবং B6, যা শারীরিক শক্তি বাড়াতে এবং মেটাবলিজম সামঞ্জস্যে সহায়তা করে।
মিনারেলসের দিক থেকে, অশ্বগন্ধা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিকাল মিনারেলস যেমন ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, এবং আয়রন সরবরাহ করে। ম্যাগনেশিয়াম মাংসপেশীর কার্যকলাপ ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যক্রমে গুরুত্বপুর্ণ, জিঙ্ক শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এবং আয়রন রক্তের কার্যকারিতাকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি অশ্বগন্ধাকে একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে পাঠকের কাছে জানান দেয়, যা দেহের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থের বিরুদ্ধে লড়াই করে রক্ত প্রবাহ, ত্বকের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বায়োলজিকাল প্রসেসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অতএব, অশ্বগন্ধার পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপের জন্য অপরিহার্য, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।
অশ্বগন্ধার স্বাস্থ্য উপকারিতা
অশ্বগন্ধা, এটির বৈজ্ঞানিক নাম Withania somnifera, একটি ঐতিহ্যগত ঔষধি উদ্ভিদ যা আমিষ-দেবী আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে, যা আধুনিক গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে। মানসিক চাপ কমানো, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধার গুরুত্ব অপরিসীম।
অশ্বগন্ধা একটি শক্তিশালী অ্যাডাপ্টোজেন, যা মানসিক চাপের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া সামঞ্জস্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমাতে সহায়ক। এর ফলে, মানসিক স্বাস্থ্যে উন্নতি ঘটে এবং উদ্বেগ ও ডিপ্রেশনের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। এর ব্যবহার ব্যক্তি বিশেষের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে।
শারীরিক সুস্থতার জন্য, অশ্বগন্ধা শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে যায়। এটি রোগ প্রতিরোধক সেলগুলোকে সক্রিয় করতে সহায়তা করে, যা শরীরের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রকে উন্নত করে। ফলে, সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণ অসুস্থতার প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
অশ্বগন্ধার শক্তিবর্ধক প্রভাবও উল্লেখযোগ্য। এটি শরীরে শক্তির স্তর বাড়াতে এবং ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে, যা দৈনন্দিন কাজকর্মে কার্যক্ষমতা বজায় রাখে। শরীরের পেশী শক্তি বৃদ্ধির জন্যও এটি সহায়ক, যা বিশেষ করে ক্রীড়াবিদদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। এই উপকারিতাগুলো অশ্বগন্ধাকে একাধিক কারণে ব্যবহারের জন্য একটি জনপ্রিয় পণ্য করে তুলেছে।
ডায়েটে অশ্বগন্ধা: ব্যবহার পদ্ধতি
অশ্বগন্ধা, যা ভারতের প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে বহুল ব্যবহারিত একটি হার্বাল উপাদান, বৈশ্বিকভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এর গুণাবলি নির্দেশ করে। অশ্বগন্ধা ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে, এটি বিভিন্ন প্রস্তুতির মাধ্যমে করা যায়। প্রধানত, অশ্বগন্ধা পাউডার, ট্যাবলেট এবং চা আকারে পাওয়া যায়।
অশ্বগন্ধার পাউডার পরিচিত ব্যবহার পদ্ধতিগুলোর একটি। এটি সাধারণত দুধ, জল বা মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। প্রায় ১/২ থেকে ১ চা চামচ অশ্বগন্ধা পাউডার প্রতিদিন খাওয়া যেতে পারে। পাউডারটি খাবারের সাথে মিশিয়ে গ্রহণ করলে এর স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
অশ্বগন্ধা ট্যাবলেটও একটি জনপ্রিয় বিকল্প, যা সাধারণত ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রামের ডোজে পাওয়া যায়। এই ধরনের প্রস্তুতি নিয়মিত ব্যবহারের জন্য সুবিধাজনক, কারণ এটি সহজেই বহনযোগ্য এবং সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করা যায়। তবে, ট্যাবলেট গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
অন্য একটি জনপ্রিয় প্রস্তুতির ধরন হলো অশ্বগন্ধা চা। এটি তৈরি করতে, এক চা চামচ অশ্বগন্ধা পাউডার বা কুঁচি করা অশ্বগন্ধা পাঁচশো মিলিলিটার পানিতে ফুটানো হয়। কয়েক মিনিটের জন্য ফুটিয়ে পর, এটি চা হিসেবে উপভোগ করা যায়। চা খাওয়ার পরামর্শ প্রতি দিন দু’বার অথবা তিনবার গ্রহণ করা।
অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, অশ্বগন্ধার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং স্বাস্থ্য ইতিহাস অনুযায়ী সঠিক মাত্রা অনুসরণ করা প্রয়োজন। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে অশ্বগন্ধা স্বাস্থ্য উপকারে অন্যতম অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
কারা অশ্বগন্ধা গ্রহণ করতে পারবে
অশ্বগন্ধা, যা সাধারণত এক ধরনের ঔষধী গাছ হিসেবে পরিচিত, বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। এটি বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনকারীদের জন্য উপকারী হতে পারে। যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য নির্বাচন করেন, তাঁদের জন্য অশ্বগন্ধা ব্যবহারের মাধ্যমে সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব। এই গাছের উপাদানগুলি শারীরিক এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, যা দৈনন্দিন চাপ ও পরিশ্রমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক।
শারীরিক এবং মানসিক চাপের শিকার ব্যক্তিদের জন্য অশ্বগন্ধা একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি মানসিক চাপের মাত্রা কমাতে সক্ষম এবং উদ্বেগের অনুভূতি হ্রাস করে। ফলে, যারা উচ্চ চাপের পরিবেশে কাজ করেন অথবা মানসিকভাবে ক্লান্তি অনুভব করেন, তাঁদের জন্য অশ্বগন্ধার নিয়মিত গ্রহণ অত্যন্ত লাভজনক। বিশেষ করে সংবেদনশীল মানুষদের স্বাস্থ্যকর জীবন যাত্রায় এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়া, অশ্বগন্ধা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এটি শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিক্যালগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। নারীদের জন্যও এটি বিশেষ উপকারী, কারণ এটি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে ঋতুকালীন সমস্যা ও প্রসবপরবর্তী মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
যথাযথ ব্যবহারে, অশ্বগন্ধা বিভিন্ন বয়সের এবং স্বাস্থ্য অবস্থার মানুষদের জন্য একটি কার্যকরী স্বাস্থ্য সংরক্ষণকারী উপাদান হতে পারে। তবে, তাদের জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত যাদের চিকিৎসা অবস্থা রয়েছে বা ঔষধ গ্রহণ করছেন।
কারা অশ্বগন্ধা এড়িয়ে যাবে
অশ্বগন্ধা, যা আধুনিক স্বাস্থ্যসেবায় একটি জনপ্রিয় ভেষজ হিসেবে বিবেচিত, সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। কিছু বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য এটি গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে। সবচেয়ে প্রথমেই গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের কথা উল্লেখ করা উচিত। অশ্বগন্ধা গ্রহণের ফলে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে, যা গর্ভাবস্থা বা স্তন্যদানের সময় সম্ভাব্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় অনেক কিছু নিষিদ্ধ করা হয়, এবং এ ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা উচিত নয়।
শিশুরাও অশ্বগন্ধা গ্রহণের জন্য উপযুক্ত নয়। শিশুদের দেহে যে ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, তা পূর্ণবয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিরল। শিশুদের শরীরের সঠিক হরমোনের ভারসাম্য এবং বৃদ্ধি সংগ্রহের জন্য অশ্বগন্ধা নিরাপদ নয়। সুতরাং, শিশুরা এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।
এছাড়া, যেসব ব্যক্তি অম্বল, ডায়াবেটিস, অথবা থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য অশ্বগন্ধা গ্রহণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হরমোনের পরিবর্তন এবং রক্তে শর্করা পরিমাণের সঙ্গে অশ্বগন্ধার সম্পর্ক অবহিত থাকা প্রয়োজন। থাইরয়েডের সমস্যা হলে, অশ্বগন্ধা গ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অতএব, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে কোনো বিশেষ সমস্যার অধিকারী ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অশ্বগন্ধা গ্রহণ করা উচিত।
এগুলো ছাড়া, অশ্বগন্ধা গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রাকৃতিক ভেষজ হলেও, এর ব্যবহার যেকোনো পরিস্থিতিতে নিরাপদ বলে বিবেচিত হয় না।
অশ্বগন্ধার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অশ্বগন্ধা (Ashwagandha), একটি প্রাচীন স্বাস্থ্যকর ভেষজ, উদ্বেগ এবং স্ট্রেস কমাতে জনপ্রিয়। কিন্তু এর ব্যবহার জীবনে কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা জানা জরুরি। অশ্বগন্ধার প্রতি সংবেদনশীলতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কিছু শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সাধারণত, অশ্বগন্ধা গ্রহণে কিছু লক্ষণ গঠন করতে পারে, যেমন ত্বকে র্যাশ, মাথাব্যথা, দুর্বলতা ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে, অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
অশ্বগন্ধার একটি আরেকটি মূল্যবান বিষয় হলো, এটি কিছু মানুষের জন্য বাতিল হতে পারে। বিশেষত, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজন। কারণ, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, অশ্বগন্ধা গর্ভাবস্থায় হরমোনের সামঞ্জস্যে প্রভাব ফেলতে পারে, যা ভ্রূণের ক্ষতি ঘটাতে পারে। এর পাশাপাশি, কিছু মানুষের উপর এটি উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে, তাই যাদের ইতিমধ্যে হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাদের ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।
যে সকল ব্যক্তির অটোইমিউন ডিসওর্ডার, যেমন থাইরয়েডের সমস্যা বা লুপাস রয়েছে, তাদেরকে অশ্বগন্ধার ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত। অশ্বগন্ধার ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নির্দেশনা ও ডোজ অনুসরণ করলে, অশ্বগন্ধার উপকারিতা গ্রহণ করা সম্ভব। কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে এটি কার্যকরী হলেও, অশ্বগন্ধা ব্যবহারের ফলে আনুষঙ্গিক সমস্যা হলে তা সঠিকভাবে সীমাবদ্ধ করা প্রয়োজন।
অশ্বগন্ধার চাষ ও সংগ্রহ
অশ্বগন্ধা (Withania somnifera) একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষধি উদ্ভিদ যা শক্তির উৎস এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এর চাষ পদ্ধতি মূলত উষ্ণ জলবায়ুর অঞ্চলে প্রচলিত। প্রথমত, উচ্চমানের বীজ নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, বীজ বেরি আকারে বাজারে পাওয়া যায় এবং সরকারি গবেষণা কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে ভাল জাত নির্বাচন করা উচিত।
অশ্বগন্ধা চাষের জন্য সঠিক মাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেলে দোআঁশ মাটি বা লোমশ মাটি অশ্বগন্ধার জন্য আদর্শ। মাটি সঠিকভাবে প্রস্তুত করা হলে, বীজ বপন করা হয়, সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে। সঠিক পরিমাণে জল এবং সার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, যা উদ্ভিদ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। নিয়মিত মনিটরিং এবং আগাছা পরিষ্কার করার মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
অশ্বগন্ধা গাছের পাতা এবং ফলের পরিপক্কতা সুনিশ্চিত হলে, এটি সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত, ৪-৬ মাস পর গাছ থেকে মূল বের করা হয়। সংগ্রহের আগে, গাছের পাতা ও শাখাগুলি আলতো করে কেটে ফেলা হয়। মূল সংগ্রহ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত যাতে মূল ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সংগ্রহের পরে, মূলগুলো পরিষ্কার করে শুকানো হয়। শুকানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, সেগুলো প্যাকেজিং করা হয়, যা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়।
স্থানীয় কৃষকদের জন্য এবং যারা অশ্বগন্ধা বাজারজাত করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য সঠিক প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি জানা অত্যাবশ্যক। নিকটবর্তী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়া যেতে পারে। উদ্ভিদটির উপকারিতা এবং বাজার সম্ভাবনা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন যাতে কৃষকরা সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেন।
সারসংক্ষেপ
অশ্বগন্ধা, একটি ঐতিহ্যবাহী ভেষজ, নিজেদের মধ্যে প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। এটি সাধারণত মানসিক উত্তেজনা কমানো, শারীরবৃত্তীয় শক্তি বৃদ্ধি, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নয়নের জন্য পরিচিত। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অশ্বগন্ধা স্ট্রেস হরমোন কোর্টিসলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে, যা মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের মোকাবিলায় কার্যকরী। এটি মৃত্তিকা নির্ভর শারীরবৃত্তে স্বাভাবিক গঠন বজায় রাখতে এবং শক্তি প্রদান করতে সাহায্য করে।
অশ্বগন্ধার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সেটি বিভিন্নভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে, যেমন পাউডার, ক্যাপসুল, বা টী এবং তেলের মাধ্যমে। প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে সামান্য পরিমাণ অশ্বগন্ধা অন্তর্ভুক্ত করলে এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে, অশ্বগন্ধা ব্যবহারের আগে ব্যক্তি বিশেষের শারীরিক পরিস্থিতি ও ইতিহাস বিবেচনা করা খুবই জরুরি। গর্ভবতী মহিলাদের, স্তন্যদানকারী মায়েদের এবং কিছু মৌলিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
অশ্বগন্ধার উপকারিতা সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেলেও, সকলের জন্য এটি নিরাপদ নাও হতে পারে। অতএব, ডায়েটের মধ্যে অশ্বগন্ধা অন্তর্ভুক্ত করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া একটি বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত। স্বাস্থ্য উপকারিতা গ্রহণের সাথে সাথে স্বাস্থ্যসচেতনতা এবং দায়িত্বশীলতা অপরিহার্য। এর সঠিক ব্যবহার ও নিরাপত্তার দিক থেকে আরো গবেষণা প্রয়োজন, যাতে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নতি সাধন করা সম্ভব হয়।
